কালার ইনসাইড

তারকাদের আত্মহত্যায় ভক্ত ও সমাজে কি প্রভাব পড়ছে?


প্রকাশ: 18/02/2024


Thumbnail

শোবিজ জগতের তারকাদের বর্তমান সমাজের তরুণ-তরুণী সহ সাধারণ মানুষ অনেকেই নিজেদের আইকন বা আইডল মনে করে। পছন্দের তারকার লাইফ স্টাইল থেকে জীবনের নানা দিক তারা অনুসরণ ও অনুকরণ করে।

এই তারকাদের জীবনের প্রভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে দারুণভাবে প্রতিফলন দেখা যায়। ফলে একজন তারকার ইতিবাচক দিক যেমন তাকে প্রভাবিত করে, আবার তার বেপরোয়া জীবনও ভক্তদের মধ্যে কিছু মানুষ ভুল করে অনুসরণ করে ফেলে।

সমাজবিজ্ঞানীদের অনেকে মনে করছেন, বিনোদন অঙ্গনে নাটক, চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত সেলিব্রিটিদের একের পর এক বিয়ের সংস্কৃতি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে।

আবার দেখা যায়, অনেক তারকা তাদের ব্যক্তি জীবন অনীহার জন্য করছেন আত্মহত্যা। যা প্রভাব পড়ছে সমাজের তরুণ তরুণীদের ওপরে। সঙ্গীত, অভিনয়, নাট্য কিংবা সিনেমা ভালোবাসেন না এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। সেই ভালোবাসার স্থানে প্রিয় তারকার আত্মহত্যা অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। ফলে ভক্তদের মনে সৃষ্টি হয় নানান প্রশ্ন কিংবা হতাশা।

এছাড়াও পছন্দের তারকার অকাল মৃত্যুতে অনেক ভক্তই মর্মাহত হয়ে পয়ে পড়ে। এতে এক রকম সৃষ্টি হয় পারিবারিক কলহ। যা কিনা ওই ভক্ত বা অনুসারীর জীবন বিনোদনের জায়গাটা হয়ে যায় বিষণ্ণতা। সেই বিষণ্ণতা হয়ে একটা মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিতে সহায়তা করে।

মনোবিদদের মতে, বিষণ্ণতা মানুষের মনের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। একজন মানুষের কোনো বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হলে কিংবা নানা কারণে মন বিষণ্ণ হতেই পারে। বিষণ্ণতা হতে পারে বিভিন্ন মাত্রা কিংবা গভীরতায়’। পৃথিবী থেকে এই বিষণ্ণতায় অনেক তারকাই অকালে বিদায় নিয়েছেন। 

ঢাকাই সিনেমার সর্বকালের সেরা নায়ক সালমান শাহ। ক্যারিয়ারের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা এই নায়কের হঠাৎ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। শোনা যায়, সালমান শাহ মৃত্যুর সময় অনেক তরুণী ভক্ত বিষণ্ণতায় ভুগে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢেলে যায়। এমনকি সালমান শাহ অকাল মৃত্যুতে এখনো চলে শোকের ছায়া।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই স্বামী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তালাকের আঘাত সইতে না পেরে হঠাৎ এই অভিনেত্রীর আত্মহত্যা করেন।

২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর নিচ থেকে তানিয়া মাহবুব তিন্নির মরদেহ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসা থেকে ২০১৩ সালের ১ জুলাই ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে লাস্যময়ী অভিনেত্রী মিতা নূরের। পরে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আত্মহত্যার প্রমাণ পায় পুলিশ।

দেখা যায়, বিনোদন অঙ্গনের যারা পেশাগত ভাবে কাজ করে, সেই পেশাগত কারণেই অনেকটা বেশি আবেগী হয়ে থাকেন তারকারা। যার কারণে ব্যক্তিগত কোন সমস্যায় পড়লে তারকারা তা থেকে বেরিয়ে আসার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। হতাশা চরমভাবে তাদেরকে ঘিরে ধরলেই হয়ত বেছে নেন একমাত্র আত্মহত্যার পথ।

এছাড়াও, তারকাদের হঠাত করে খ্যাতি অর্জনে, অধিক অর্থের মালিকানা থেকে শুরু করে উচ্চাভিলাষী হওয়ায় অনেকেই তাদের পরিবারকেও অবহেলা করে। ফলে পরিবারের স্থানে আপনজনদের তোয়াক্কা না করার প্রবণতায় এক পর্যায় তাদের করে তুলে হতাশা। যার কারণে মারাত্মক বিষণ্ণতায় ভুগে একজন তারকা। ফলে এক পর্যায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, যার প্রভাব পড়ে ওই তারকার পরিবার আপনজন থেকে শুরু করে সামাজের সাধারণ মানুষ তথা ভক্ত বা অনুসারীদের ওপর।

বর্তমানে সামজিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে গেছে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রামসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম। যার কারণে কোন তারকা আত্মহত্যা করলে তা মুহূর্তেই বিনোদনপ্রমী, ভক্ত বা অনুসারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে সুশীল সমাজে এর প্রভাব পড়ছে ব্যাপকহারে। একজন অনুসারী বা ভক্ত যখন তার প্রিয় তারকাকে পৃথিবী থেকে বিদায় হওয়ার খবর শুনে তখন  ওই ভক্তের মন  ভেঙ্গে যায়, এর ফলে মস্তিস্কে তৈরি হয় হতাশা। যা তার চলমান জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। 

সর্বোপরি বলা যায়, তারকাদের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা না হলে দেশের তরুণ-তরুণীদের  আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকিটা কমানো অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। কেননা, একজন তারকাকে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অনুসরণ করে থাকেন। সেই অনুসরণের প্রেক্ষাপটে দেশের বিনোদন অঙ্গনের তারকাদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি ভক্ত বা অনুসরণকারীদের নিজের আপনজন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের কথা ভেবে নিজেদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে যেন সক্ষম হয় এমনটাই মনে করছেন সমাজের সচেতন মহল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭