ইনসাইড পলিটিক্স

তারেক জিয়ার সরে যাওয়া: তিন বিকল্প প্রস্তাব


প্রকাশ: 19/02/2024


Thumbnail

লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া দলের সাংগঠনিক পদ থেকে সরে যেতে পারেন। বিএনপির মধ্যে এই আলোচনা এখন তুমুল। বিশেষ করে দলের শীর্ষ নেতারা মুক্তি পাওয়ার পর এখন তারেক জিয়ার মূল নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র—এটি বলছেন অনেক বিএনপির শীর্ষ নেতারাই।

গত কয়েকদিন ধরে তারেক জিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। লন্ডনে থেকে তিনি যথাযথ ভাবে দল পরিচালনা করতে পারছেন না, দলের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। এজন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন, সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক তৎপরতায় সম্পৃক্ত এমন কাউকে দলের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারেক জিয়া। 

বিএনপির অন্তত দুজন শীর্ষ নেতা তারেক জিয়ার এই অবস্থানের কথা স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ভুল রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনে না যাওয়া এবং শেষপর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনকে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা হল, পাকিস্তানে কারান্তরীণ অবস্থায় ইমরান খান যেভাবে চমক দেখিয়েছেন সেটা বিএনপির জন্য আরেকটি বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 

বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ বলছেন যে, ইমরান খান যদি কারান্তরীণ হয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে, তাহলে তারেক জিয়া কেন দেশে আসতে পারেন না। তারেক জিয়া বিদেশে বসে আরাম আয়েশের জীবনযাপন করছেন আর নেতারা এমনকি তার মা পর্যন্ত দুর্যোগের মধ্যে অবস্থান করছেন। এটি কোন নেতার কাজ হতে পারে না। পালিয়ে থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে আরাম আয়েশের জীবনযাপন করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়াটা কতটা সমীচীন এই প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির মধ্যে থেকে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তারেক জিয়া যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তা নিয়ে দলের মধ্যে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। আর এই বাস্তবতায় তারেক জিয়াও নির্বাচনের পর নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, তারেক জিয়া যদি শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব থেকে সরে যান, তার প্রধান কারণ হবে আন্তর্জাতিক চাপ। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে যে, দেশে না থেকে একজন ব্যক্তির নেতৃত্ব দেওয়াটা নৈতিকভাবে সঠিক নয়। এর ফলে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না, দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থানও জানা যাচ্ছে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করেছিল যে, বিএনপি যেন নির্বাচনে আসে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পর যদি কোন কারচুপি বা অনিয়ম হতো তাহলে সেটি আন্তর্জাতিক মহল দেখতো এবং তখন সরকারকে চাপে ফেলা যেত। কিন্তু বিএনপি সে পথে পা দেয়নি, না দেওয়ার ফলে এখন বর্তমান সরকারের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যেমন সহজ হয়েছে, তেমনই আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনও খুবই সহজ সাধ্য বিষয় হয়েছে। এর ফলে বিএনপির রাজনীতি এক অনিশ্চয়তার গভীর অন্ধকারে নিপতিত হয়েছে। 

এই বাস্তবতায় বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বের ডাক উঠেছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছেন যে, এমন নেতা দরকার যারা দেশে থাকবেন এবং যে কোন সময় তাদেরকে পাওয়া যাবে। এই পরিস্থিতিতে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি হবে বা বিএনপিতে তার অবস্থান কি হবে এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, তিনটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। প্রথমত, তারেক জিয়া সাংগঠনিক বা নির্বাহীর দায়িত্বে থাকবেন না, নির্বাহীর দায়িত্বে না থেকে তিনি কোন অলংকারিক পদ গ্ৰহণ করবেন। এই অলংকারিক পদ কি হতে পারে এই নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা রয়েছে। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন যে, তারেক জিয়া এখন বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আবার কেউ কেউ বিএনপির পৃষ্টপোষক হিসেবে তাকে প্রস্তাব করছেন, অন্য দিকে কেউ কেউ বলছেন, বিএনপিতে তিনি শুধুমাত্র নামমাত্র সদস্য হিসেবে থাকবেন, আর কিছু নয়। তবে এই তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোনটি হবে তা নির্ভর করছে তারেক জিয়ার ওপর। 

বিএনপির বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন যে, কাগজে কলমে তারেক জিয়া যে পদেই থাকুক না কেন, বিএনপির চাবি থাকবে তার হাতেই এবং সেরকম একটি ব্যবস্থা করেই তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। কাগজে কলমে তিনি নেতৃত্ব ছাড়ছেন শুধুমাত্র জনরোষ এবং আন্তর্জাতিক মহলের সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭