ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদা-ফখরুলের কী কথা হল?


প্রকাশ: 20/02/2024


Thumbnail

কারামুক্তির পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকালই প্রথম দেখা করলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে। গতকাল রাত ৮ টার দিকে তিনি ফিরোজায় যান এবং ১ ঘণ্টা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন ফিরোজায় যান তখন তিনি একা ছিলেন, তার সঙ্গে অন্য কোন নেতাকে দেখা যায়নি। মির্জা আব্বাস কিংবা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মুক্তি পেলেও তাদেরকে বাদ দিয়েই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সাক্ষাৎকার হয়েছে। আর এই সাক্ষাৎকারে বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কোন রাজনৈতিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, যদি এটি কারামুক্তির পর বেগম জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হতো তাহলে অন্য কার মতো নেতাদেরকেও তিনি ডাকতেন। কিন্তু সেটি হয়নি বরং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এককভাবে ডাকার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া একটি বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে এই বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি৷ বিএনপির তথ্য সেল থেকে বৈঠকের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে মাত্র। 

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, যে চলমান রাজনৈতিক ব্যর্থতা, তারেক জিয়ার নেতৃত্ব এবং সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও এখন বেগম খালেদা জিয়া দলের কোন দায়িত্বই পালন করছেন না। তিনি নামকাওয়াস্তে দলের চেয়ারপার্সন। বিএনপি এখন তারেক জিয়ার নেতৃত্বেই চলছে। তারেক জিয়ার কথাই শেষ কথা। বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন না। এরকম একটি বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বেগম জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে। কারণ, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া বেগম খালেদা জিয়া ১ ঘণ্টা ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কী আলোচনা করলেন? 

বিভিন্ন মহল এই বৈঠকের তিন রকমের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার আপাতত তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়েছেন এবং এই ব্যাপারে তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা এবং পরামর্শ করেছেন। 

দ্বিতীয় একটি মতামত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে রয়েছে৷ তারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ব্যর্থতা এবং সামনের দিনের করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। বিএনপির বর্জনের পরও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এই নির্বাচন স্বীকৃতি পেয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে আন্দোলন কেন ব্যর্থ হল? বিএনপি কেন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না? সাংগঠনিক ক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায়? এসব বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতামত নিতে পারেন বলে কোনও কোনও মহল মনে করছেন। এবং, এই মতামতের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তী করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিতে পারেন৷ 

তৃতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য সামনের দিনগুলোতে করণীয়, বিশেষ করে স্থায়ী কমিটির পাঁচটি শূন্যপদ পূরণ, স্থায়ী কমিটিতে যারা অসুস্থ এবং দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাদের প্রতিস্থাপন করেন নতুন নেতৃত্ব দেওয়া বিষয়টিও আলোচনা করে থাকতে পারেন। তবে, বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়া-ই বিএনপিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তারেক জিয়ার ব্যর্থতা, ভুল রাজনৈতিক কৌশল এবং হঠকারী আন্দোলনের পদ্ধতি বিএনপির মধ্যে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। আর এই সমালোচনার কারণেই শেষ পর্যন্ত তারেক জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে পারেন। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের বৈঠকটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতির গতিধারা নির্ধারণে এই বৈঠক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলেই কেউ কেউ মনে করছেন। এখন বেগম জিয়ার সাথে বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি করেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭