ইনসাইড বাংলাদেশ

আফরিনের ঢাকা সফরের উদ্দেশ্য কী?


প্রকাশ: 20/02/2024


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফরে আসছেন। তিনদিনের এই ঢাকা সফরটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এটি কোনো মার্কিন উচ্চপদস্থ কূটনীতিক কর্মকর্তার ঢাকা সফর। এই সফরের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক বার্তা দেবে বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল।

নির্বাচনের আগে টানাপোড়ন এবং মতদ্বৈততা কাটিয়ে দুই দেশ অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন সূচনা করতে চায়—এরকম বার্তা দেওয়া হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। একই রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকেও। আর সেই বার্তাকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য আফরিন আক্তারের তিন দিনের ঢাকা সফর।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, ঢাকা সফরে আফরিন আক্তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ খন্দকার মাসুদ আলমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন। এর পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। তবে আফরিন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করবেন কিনা এই নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

একটি কূটনীতিক সূত্র বলছে, আফরিন আক্তার বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চা চক্রে মিলিত হতে পারেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও মতবিনিময় করতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক সময়সূচি পাওয়া যায়নি।

তবে তিনটি কারণে আফরিন আক্তারের এই বাংলাদেশ সফর গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সরকারের মতপার্থক্য প্রকাশ্য হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রীতিমতো তৎপরতা শুরু করেছিল। আর এরকম একটি বাস্তবতায় যদি বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলেও গুঞ্জন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বললেও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। 

এবার আফরিন আক্তার বাংলাদেশ সফর করলে এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী কী কাজ করা যায় সেটি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সহাবস্থান, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সহিংসতা পরিহার করে একটি সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে মতপার্থক্য দূর করার যে আহ্বান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে আসছে, সেটির ব্যাপারেও আফরিন আক্তার তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করতে পারেন। বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার বা রাজনৈতিক আন্দোলনে সন্ত্রাস পরিহার, এই বিষয়গুলো আফরিন আক্তারের সফরে আলোচনা হতে পারে। 

তৃতীয়ত, ড. ইউনূস প্রসঙ্গটি আসতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ড. ইউনূস শ্রম আদালতের একটি মামলায় দন্ডিত হয়েছেন। দুর্নীতির অর্থ পাচারের একটি মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। এছাড়াও গ্রামীণ কল্যাণ তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। এই বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বিবেচিত ড. ইউনূসকে রক্ষার জন্য তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি না, সেটি দেখার বিষয়। বিভিন্ন সূত্র মনে করছেন যে, ড. ইউনূসের প্রসঙ্গটি আফরিন আক্তারের সফরে আলোচনায় আসতে পারে। তবে আফরিন আক্তারের সফরে একটি বিষয় খুব সুস্পষ্ট হবে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে কোনো বৈরিতা নয়, বরং সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তার এই সফর সেই বার্তাই বহন করে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭