ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের হারিয়ে যাওয়া নেতারা


প্রকাশ: 20/02/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন, সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, বড় নেতা হওয়ার সব ধরনের গুণাবলী তাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু একটি ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা ভুল পথে নিজেদেরকে পরিচালিত করার জন্য তারা এখন কক্ষচ্যুত, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তারা হারিয়ে গেছেন। যে সময় তাদের আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ার কথা সেই তারা ধুঁকছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আশ্রয় খুঁজে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এরকম নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নেতার নাম- 

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ: সুলতান মোহাম্মদ মনসুর পঁচাত্তরের পর প্রথম ছাত্রলীগের নেতা যিনি ডাকসুর ভিপি হয়েছিলেন এবং অনবশী বক্তা হিসেবে রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং পড়াশোনার দিক থেকে তাকে অত্যন্ত মেধাবী মনে করা হত। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তাকে বিভিন্ন সময় অনেকে বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু এক-এগারোর সময় তিনি হঠাৎ করে সংস্কারপন্থী হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিকে মাইনাস করার জন্য যে নেতারা উঠেপড়ে লেগেছিলেন তাদের কাতারে নিজের নাম যুক্ত করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার রাজনীতিতে হারিয়ে যাওয়ার অধ্যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়নি। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। পরবর্তীতে তিনি ২০১৮ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তিনি বিজয়ী হলেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিককে নির্বাচন করাটাকে মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। যদিও নির্বাচনের পরে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বিএনপির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেই জাতীয় সংসদে যান এবং সেখানে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তিনি আশা করেছিলেন যে, এবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে তিনি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি নির্বাচনেও যাননি। এখন এই প্রতিভাবান যোগ্যতা সম্পন্ন এই নেতা এক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতে শুধু অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। 

মোস্তফা মোহসীন মন্টু: মোস্তফা মোহসীন মন্টু আওয়ামী লীগের আরেকজন সম্ভাবনাময় নেতা ছিলেন। পঁচাত্তরের পরে যারা ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করার কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের পাল্লায় পড়ে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী হয়ে ওঠেন। দলের ভিতরে অন্তর্কলহ এবং নানা রকম বিভাজন সৃষ্টি করেন। একটি নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। এরকম বাস্তবতায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি গণফোরামের অন্যতম নেতা হয়েছিলেন। কিন্তু গণফোরাম শেষ পর্যন্ত একটি নাম সর্বস্ব ও অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকে। ২০১৮ নির্বাচনের পর গণফোরামের সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়। এখন তিনি নিজেই একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করেছেন, যে রাজনৈতিক দলটি অস্তিত্বহীন।

অধ্যাপক আবু সাঈদ: আওয়ামী লীগের আরেক জন সম্ভাবনাময় নেতা অধ্যাপক আবু সাঈদ। আওয়ামী লীগের একজন তুখোড়  গবেষক এবং বুদ্ধিদীপ্ত নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। আওয়ামী লীগের এক সময় তিনি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পরিণত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে অধ্যাপক আবু সাঈদকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং সেসময় তিনি জাতির পিতার ইতিহাস গণমাধ্যমে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তুলে ধরা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু এক-এগারোর সময় তিনি হঠাৎ করেই সংস্কারপন্থী হয়ে যান। অনেকে মনে করেন আওয়ামী লীগে যারা সংস্কারপন্থী হয়েছিলেন তাদের নাটের গুরু ছিলেন অধ্যাপক আবু সাঈদ। ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় নির্বাচন করেছেন স্বতন্ত্র ভাবে। সর্বশেষ এবারও তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। একজন সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক নেতা ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত পারেন তার প্রমাণ অধ্যাপক আবু সাঈদ। আওয়ামী লীগের এরকম অনেক রাজনৈতিক নেতা আছেন যারা অনেক সম্ভাবনা জাগিয়ে ছিলেন কিন্তু তাদের ভুলের কারণে তারা রাজনীতিতে হারিয়ে গেছেন। এ সমস্ত হারিয়ে যাওয়া নেতারা সকল রাজনীতিবিদদের জন্য একটি শিক্ষা বটে। রাজনীতিতে একটি ভুল তার পুরো ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭