ইনসাইড বাংলাদেশ

গাভী গর্ভবতী, তাই বাড়ি ছাড়েননি পদ হারানো প্রতিমন্ত্রী


প্রকাশ: 20/02/2024


Thumbnail

বাংলাদেশে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পান তার মধ্যে সরকারি বাসভবন একটি। অনেক মন্ত্রী বাংলো ধরনের বিশাল সুরম্য ভবন পান অনেকে। ইদানীং প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদেরকে মিনিস্টারস অ্যাপার্টমেন্টে বড় পরিসরের ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা পুরনো আমলের সেই বাংলো বাড়িগুলো পান, যে বাড়িতে প্রচুর খালি জায়গা থাকে, জমি থাকে। গত মেয়াদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সেরকমই একটি বাড়ি পেয়েছিলেন। ৩৫ মিন্টো রোডে তার বাড়িটি ছিল বিশাল। 

সরকারের নিয়ম অনুযায়ী একজন মন্ত্রী পদ হারানোর এক মাসের মধ্যে তার বাড়ি ছেড়ে দিতে পারেন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভার সদস্য জাকির হোসেন এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। এরপর ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠন করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তার সরকারি বাসভবন ছেড়ে দেওয়ার কথা। অন্য সব মন্ত্রীরা সরকারি বাসভবন ছেড়ে দিলেও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তার বাসভবন ছেড়ে দেননি। বরং এই বাসভবন ছেড়ে না দেওয়ার জন্য তিনি নানারকম অনুনয় বিনয় করছেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, তিনি একমাস সময় চেয়েছেন। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে যে, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িটিতে রীতিমতো একটি খামার করা হয়েছে। গরুর এই খামার নিজে তত্ত্বাবধান করেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। আর যখনই তাকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় বা তাগিদ দেওয়া হয়, তখনই তিনি বলেন যে, তার একটি গাভী গর্ভবতী হয়েছে। এই গর্ভবতী গাভীকে নিয়ে এখনই তিনি বাড়ি ছাড়তে পারবেন না। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে, কথা উঠেছে। বিশেষ করে নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছিল এবং নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে যখন মনোনয়ন পাননি, তখন কিছু লোক তার বাসভবনে গিয়ে হইহট্টগোল করছিল। এরপর গোয়েন্দা শাখার তত্ত্বাবধানে তিনি দেনা পাওনা মিটিয়ে দিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। যদিও প্রতিমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এখন বাড়িছাড়া নিয়ে তার এই টালবাহানা সরকারকে বিরক্ত করছে। 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি যদি এ ধরনের আচরণ করে তাহলে আমরা তার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করতে পারি? 

মজার ব্যাপার হল যে, ওই বাড়িটি নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানকে। আব্দুর রহমান পরিবাগের একটি ফ্ল্যাটের বাসায় থাকেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই মন্ত্রী হওয়ার পর তার কর্ম ব্যস্ততা বেড়েছে। লোকজনের আসা যাওয়াও বেড়েছে। এরকম অবস্থায় একটি ফ্ল্যাট বাসায় তার থাকাটা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি বাড়ি চাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে বলতেও পারছেন না। আর এ কারণে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীও বাড়ি ছাড়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সর্বশেষ তিনি আরও একমাস সময় চেয়েছেন কিন্তু গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার অনেকের শঙ্কা শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ি ছাড়বেন তো! নাকি তার আরেকটি গাভী গর্ভবতী হয়ে যাবে। সেই অজুহাতে তিনি আবার সময় বাড়াবেন না তো! এটিই এখন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটা বড় শঙ্কার জায়গা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭