ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

‘আমার বাপজানের ইতালি যাওয়া লাগত না, তোমরা ওরে ফিরাইয়া দাও’


প্রকাশ: 21/02/2024


Thumbnail

‘সুখের লেইগা ভগবানের ওপর ভরসা কইরা পাঁচখোলা ইউনিয়নের রাসেল খানের হাতে ১২ লাখ টাকা দিছিলাম। ওরা আমার বাপজানরে মাইরা ফালাইল। তোমরা আমার বাপজানরে আইনা দাও, আমাগো টাকা লাগত না।’ এভাবেই বিলাপ করে কাঁদছিলেন অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী।

তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে যে আট বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, সজল বৈরাগী (২৪) তাদের একজন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সজল সবার ছোট। ভিটেমাটি সব বিক্রি করে দালালকে টাকা দিয়ে নিঃস্ব সুনীল বৈরাগী হারালেন সন্তানকেও। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহত আট বাংলাদেশির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা সজল বৈরাগী ছাড়াও অন্যরা হলেন একই উপজেলার কদমবাড়ির নয়ন বিশ্বাস, উপজেলার খালিয়ার মামুন সেখ, উপজেলার বাজিতপুর নতুনবাজারের কাজী সজীব ও উপজেলার কবিরাজপুরের কায়সার, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাগদীর রিফাত, উপজেলার দিগনগরের রাসেল এবং গঙ্গারামপুর গোহালার ইমরুল কায়েস ওরফে আপন।

মন্ত্রণালয় জানায়, নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৪টার দিকে। নৌকাটি লিবিয়ার জুয়ারা উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে। দুর্ঘটনার কবলে পড়া নৌকায় চালকসহ ছিলেন ৫৩ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। জীবিত আছেন ৪৪ জন। নিহতদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশিদের মধ্যে সাতজন পাসপোর্ট ছাড়া ভ্রমণ করছিলেন।

জীবিতদের মধ্যে বাংলাদেশের ছিলেন ২৭ জন। এ ছাড়া পাকিস্তানের আট, মিশরের তিন, সিরিয়ার পাঁচ, নৌকায় চালক হিসেবে ছিলেন মিশরের এক ব্যক্তি। নিহতদের মধ্যে আটজন বাংলাদেশের এবং অন্যজন পাকিস্তানের।

গতকাল সজল বৈরাগীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সবাই শোকে মুহ্যমান। প্রতিবেশীসহ আশপাশের মানুষ তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কোনোভাবেই কান্না থামাতে পারছিলেন না সজলের বাবা সুনীল বৈরাগী। তিনি বলেন, ‘আমার লগে বাপজানের কথা হইল। আমারে কইল ওদের গেম হইয়া যাইব, ইতালি পৌঁছে যাইব, চিন্তা করা লাগব না। হঠাৎ শুনি আমার বাপজান আর দুনিয়ায় নাই। আমার তো সবই গেল।’

একই অবস্থা দেখা গেছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের নিহত মামুন সেখেরে বাড়িতে। পরিবারের মেজো ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মামুনের মা আছিয়া বানু। ছেলের বিভিন্ন স্মৃতিকথা মনে করে কেবলই বিলাপ করছেন তিনি। এ সময় কথা হয় মামুনের বড় ভাই সজীব শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছোট ভাই মামুনকে ইতালি পাঠানোর জন্য ১১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন দালালের হাতে। ইতালি পৌঁছার আগেই পরপারে চলে গেল প্রিয় ভাই আমার।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে মাইরা ফালাইছে দালাল মোশাররফ। আমি তার বিচার চাই।’

এদিকে গোপালগঞ্জের নিহতদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য মুকসুদপুর উপজেলার গজিনা গ্রামের রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নেয়। এই দুই দালালের বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭