ইনসাইড বাংলাদেশ

অর্থ পাচারকারীদের কাছে সরকার কেন অসহায়?


প্রকাশ: 21/02/2024


Thumbnail

গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে ‘টক অফ দ্য টাউন’ হল একজন সাবেক মন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে দুই হাজার সাতশ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান। ব্লুমবার্গের এই খবর সারা দেশে তোলপাড় ফেলেছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বক্তব্য পাওয়া যায়নি যাকে নিয়ে এই তোলপাড় হচ্ছে, সেই সাবেক  মন্ত্রীর পক্ষ থেকেও। আর সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থপাচার যে কী ভয়াবহ রূপ পেয়েছে, তা ব্লুমবার্গের রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার হয়েছে। 

বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, একজন মন্ত্রী তার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় যদি এভাবে অনৈতিক এবং অবৈধ ভাবে বিদেশে টাকা পাচার করে সম্পদ করতে পারেন তাহলে অন্যদের কী অবস্থা। বিভিন্ন সময় অর্থপাচারের অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তারা ক’জন আইনের আওতায় এসেছেন এবং তাদের পাচার করা অর্থ কতটুকু উদ্ধার হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে কাদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত সরকার প্রকাশ করতে পারেনি। প্রকাশ করতে পারেনি কানাডার বেগম পাড়া সহ বিদেশে যারা সম্পত্তির পাহাড় গড়েছেন। তাদের নামধাম ইত্যাদি মানুষ জানে, সরকারেরও অজানা নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং শাস্তি প্রদানে সরকারের মধ্যে এক ধরনের সংকোচ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

সম্প্রতি বিএফআইইউ এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সন্দেহজনক লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই ধরনের সন্দেহভাজন লেনদেনগুলোর সঙ্গে যে অর্থপাচার জড়িত তা বুঝতে কোন পণ্ডিত হবার দরকার নেই। সরকারের পক্ষ থেকেস্বীকার করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে, তার অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হল, অর্থপাচার এবং খেলাপি ঋণ। কিন্তু এই দুটির বিরুদ্ধেই সরকার ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে।

সরকারি তথ্যমতে, বাংলাদেশে অর্থ পাচারের একটি বড় অংশ হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। অর্থপাচার যদি বন্ধ করা না যায় তাহলে অর্থনীতির সামনের দিনগুলোতে ঘোর অমানিশা আছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকারের দায়িত্ব হল, দল মত নির্বিশেষে নির্মোহ ভাবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা। অর্থ পাচারকারীদেরকে চিহ্নিত করা, তাদের অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু সরকার সেটি এখন পর্যন্ত করতে পারছে না। যদিও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, অর্থ পাচার বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই সমস্ত অর্থপাচারকারীদেরকে চিহ্নিত করা, তাদের সামাজিক ভাবেও হেয় করা এবং তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করার কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। 

বাংলাদেশে এখন রিজার্ভ সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার যে আহাজারি তার পিছনে মূল কারণ হল অর্থপাচার। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ বলছেন, সুইস ব্যাংকে যে অর্থ বাংলাদেশিরা পাচার করেছেন বা বিদেশে যারা অর্থ পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অর্থ পাচার বন্ধ হবে। কিন্তু সরকার কেন সেটি পারছে না সেটি হল এখন বড় প্রশ্ন। আর অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে এই সরকারের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাই সরকারকে অর্থ  পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে, নির্মোহ হতে হবে। তিনি আওয়ামী লীগের কোন মন্ত্রী বা নেতা হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেই হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭