ক্লাব ইনসাইড

বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছার অভিযোগে ২ নেতার বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান


প্রকাশ: 22/02/2024


Thumbnail

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের দুই নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অমর্ত্য রায় জন ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি। অমর্ত্য ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ও ঋদ্ধ সাধারণ সম্পাদক।

গতকাল মঙ্গলবার (২০ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র ইউনিয়নের এই দুই নেতাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিন্ডিকেট সচিব আবু হাসান।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে পূর্বে থেকে আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে ফেলার ঘটনায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে এক বছর করে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে পূর্বে আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে বলে দাবি করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

তাদের অঙ্কিত 'ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’ শীর্ষক গ্রাফিতিতে একটি নারীর অবয়ব, ছয়টি মাথার খুলিসহ একটি পতাকা আঁকা হয়। নারীর অবয়বের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পূর্বের প্রতিকৃতি মুছে ফেলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অনশনরত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম।

ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের পেছনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে তিনি প্রায় ৮৩ ঘন্টা একটানা অনশন করেন। এক পর্যায়ে উপাচার্য এসে এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত শেষে সিন্ডিকেট সভায় শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন ছাত্রলীগের এই নেতা। এছাড়া এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুই সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।


শাস্তি ঘোষণার পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি প্রদান করায় ধন্যবাদ জানাই। এই রায়ের মাধ্যমে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী খুশি। এটা হওয়া উচিত ছিলো। জাতির পিতাকে অবমাননা করলে পৃথিবীর যেই প্রান্তেই হোক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার প্রতিবাদ করবে। আজকে আমরা সত্যিই আনন্দিত।

এদিকে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড বসানো ছাড়া তড়িঘড়ি করে বহিস্কারের সিদ্ধান্তে আমাদের শিক্ষাজীবনের যে ক্ষতি করেছে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে মন্তব্য করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় জন বলেন, প্রথমত বলতে চাই এই গ্রাফিতি ব্যঙ্গচিত্র নয়, ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি। দ্বিতীয়ত এই বহিষ্কার কোনো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে ঘটে নি। কারণ প্রথমত শোকজ দেয়ার কথা, দ্বিতীয়ত তদন্ত কমিটির কার্যদিবস শেষ হওয়ার আগেই সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়। একটা পুরনো ক্ষয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর এনোনিমাস দেয়ালচিত্র মুছে যদি এরকম বহিষ্কারের শিকার হতে হয় তার মানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যেও স্বৈরাচারের প্রতিফলন ঘটেছে।

কোনো শো-কজ বা ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মিটিং ছাড়া এই বহিষ্কারাদেশ অবৈধ তাই আমরা এই আদেশকে প্রত্যাখ্যান করছি মন্তব্য করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত অন্যায্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। এটি কোনো ব্যাঙ্গচিত্র নয়, এটি একটি ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি। যে দেয়ালটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি সমকালীন আন্দোলন-সংগ্রামে বিভিন্ন সময়কালে গ্রাফিতির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোনো শো-কজ বা ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মিটিং ছাড়া এই বহিষ্কারাদেশ অবৈধ, তাই আমরা এই আদেশকে প্রত্যাখ্যান করছি।

গ্রাফিতি আঁকার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রাজনৈতিক সংগঠনের দুই নেতাকে বহিস্কার অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি ঘটনা উল্লেখ করে অর্থনীতি ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী দে বলেন, দুজন ছাত্রনেতাকে গ্রাফিতি আকার দায়ে বহিষ্কারাদেশ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীদের মামলা করা হবে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় অহরহ চাঁদাবাজির ঘটনা শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা, ছাত্রলীগের নেতারা ঘটাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট নেয় না। এই বিচারের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলেও খুব তাড়াহুড়ো করে তা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকে আমাদের সকলকে ডাইভার্ট করতেই প্রশাসন এই অন্যায্য ও ষড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭