ইনসাইড বাংলাদেশ

বিশ্বসেরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই হাল করেছিলেন স্বাস্থ্যের?


প্রকাশ: 23/02/2024


Thumbnail

বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেকে বিশ্বসেরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন। করোনা মোকাবিলায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করেছিলেন। রাষ্ট্রের সম্পদ উজাড় করে তাকে পাঁচ তারকা হোটেলে দেওয়া হয়েছিল সংবর্ধনা। অথচ করোনা মোকাবিলায় শুরুতে তার সীমাহীন ব্যর্থতার কথা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল, সমালোচিত হয়েছিল। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে সরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবকে। কিন্তু বহাল ছিলেন জাহিদ মালেক। 

যখন প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় চেষ্টায় উদ্যোগে এবং দক্ষ নেতৃত্বে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয় তখন আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নিজেকে দাবি করেন, করোনা মোকাবিলায় অনন্য যোদ্ধা হিসেবে, নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১০ বছর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রথম পাঁচ বছর ছিলেন প্রতিমন্ত্রী, দ্বিতীয় পাঁচ বছর পূর্ণ মন্ত্রী। তার কোন প্রতিমন্ত্রী ছিল না, একাই চালিয়েছেন। তার সময়ে সাহেদ কেলেঙ্কারি হয়েছে, সাবরিনা কেলেঙ্কারি হয়েছে, মিঠু কেলেঙ্কারির ঘটনা নতুন করে শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, অরাজকতা যে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তার এক ঝলক দেখা যাচ্ছে এখন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন, যিনি একজন সৎ নীতিবান মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি আসার পরই জাহিদ মালেকের থলের বিড়াল যেন বেরিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, অন্যায় এবং দুর্নীতির বিভৎস চিত্র জনসমক্ষে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ট। এতদিন যাকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল সেই ভয়ঙ্কর ক্ষতগুলো জনসমক্ষে বেরিয়ে আসছে একের পর এক। সামান্য সুন্নতে খতনা করতে শিশুর মৃত্যুর খবরে সারা দেশ আতঙ্কিত স্তম্ভিত। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোকে নজরে আনার কেউ ছিল না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তার একান্ত অনুগতগণ এই সমস্ত অবৈধ ক্লিনিক থেকে বাড়তি কিছু পেয়েছেন কিনা তা নিশ্চয়ই তদন্ত করার ব্যাপার। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাকের ডগায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এত সাফল্যের মধ্যে এত
অনিয়ম, বিশৃঙ্খলতা কীভাবে চলে সেটাই দেখার বিষয়। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার ১০ বছরের রাজত্বে কয়টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছিলেন সেটি যেমন প্রশ্ন, তেমনই স্বাস্থ্যখাতে যে কেনাকাটা গুলো হয়েছে তা কতটুকু যৌক্তিক সেই প্রশ্ন এখন সামনে উঠেছে। ডা. সামন্ত লাল সেনের তৎপরতার কারণে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে এখন অভিযান শুরু হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যিনি আজীবন স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের ঠিকাদারি প্রায় পেতে চলেছেন, তিনি এতদিন কী করেছেন? জীবনে কোনদিন প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞতাহীন এই ব্যক্তি একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য খাতের বারটা বাজছে তার নেতৃত্বে। এখন নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, নতুন সচিব আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভূতগুলো তাড়ানোর এখনই সময়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অদক্ষ, অযোগ্য এবং দুর্নীতিবাজদের আখড়া এটা সবাই জানে। আর এ কারণেই অবৈধ ভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক, প্রাইভেট হসপিটালের অত্যাচার মানুষকে সহ্য করতে হচ্ছে। নতুন ম্বাস্থ্যমন্ত্রী সৎ, বিচক্ষণ, তিনি দায় এড়ান না এবং ক্ষতগুলোকে ধামাচাপা দেন না। নিজের সাফল্য গাথাঁ নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেন না। আর এ কারণেই তার ওপর জনগণের আস্থা বেড়েছে। বিশেষ করে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি যেভাবে অনিয়ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছেন তাতে সাধারণ মানুষের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। আর এ কারণেই এখন প্রশ্ন উঠেছে তাহলে গত পাঁচ বছর এই ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চলল কিভাবে। কেন তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান চলল না। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভালো মানুষ সেজে বড় বড় কথা বলছেন, তখন তিনি কি করেছিলেন? তিনি কি জানতেন না যে, এভাবে অবৈধ রমরমা ব্যবসা চলছে নাকি তাদের যোগসাজশে এসব হত? এই সব প্রশ্নের উত্তর এখন খুজেঁ বের করা জরুরি। না হলে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ব্যর্থ হবেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭