ইনসাইড বাংলাদেশ

চীনের সঙ্গে সম্পর্কের লাগাম টেনে ধরেছে সরকার?


প্রকাশ: 23/02/2024


Thumbnail

১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর কূটনৈতিক অঙ্গনে কিছু নীরব পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাচাল প্রকৃতির ছিলেন। তিনি অনেক কথা বলতেন এবং কূটনৈতিক নিয়ম নীতি শিষ্টাচার ইত্যাদি বিষয়ে তার কোন তোয়াক্কা ছিল না। কিন্তু নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত সংযত, দায়িত্বশীল এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করছেন ভেবে চিন্তে এবং তার প্রতিটি বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার সুলভ। আর এর মধ্যে নতুন মন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন সরকারের পররাষ্ট্র নীতিতেও কিছু মেরুকরণ এবং পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অনেক কূটনীতিক বিশ্লেষক বলতেন যে, আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চীনপন্থী ছিলেন। চীনের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ কারণে ভারতের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। অনেকে মনে করতেন ভারত তাকে পছন্দ করে না। বিশেষ করে ভারতের ব্যাপারে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি ভারতের সাথে তার নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে তলানিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই কারণেই অন্তত দুটি সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতে যেতে পারেননি। তবে ড. হাছান মাহমুদ তার সম্পূর্ণ উল্টো। তিনি তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি কৌশল ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট করেছেন। তিনি তার পররাষ্ট্রনীতিতে প্রথম স্থান দিয়েছেন ভারতকে। প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে গেছেন এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তাটি তিনি স্পষ্টভাবে দিয়েছেন। 

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে খেপিয়ে না তুলে তাদের সাথে কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। যে কারণে নির্বাচনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে কোন রকম বেসামাল এবং দায়িত্বহীন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নতুন সরকারের সঙ্গে যে অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন, সেটাকে সরকার ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে তাদের নেতিবাচক কোন মনোভাবই এখন পর্যন্ত দেখায়নি। বরং অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশই এখন আগ্রহী বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের একটি বড় উদ্বেগের জায়গা ছিল চীনের সাথে সরকারের সম্পর্ক। বিশেষ করে সরকারের ভেতর বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী চীনপন্থী ছিলেন, যারা বাংলাদেশকে চীনের অর্থনৈতিক জালে বন্দী করা ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। চীনের অনেকগুলো প্রকল্পই এখন পাইপলাইনে এবং এই সমস্ত ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নিচ্ছে না। 

সরকারের বৈদেশিক ঋণের চাপ বেড়েছে। এবার বৈদেশিক ঋণ এবং সুদ পরিশোধ করতে হবে চার বিলিয়ন ডলারের মতো। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। এই বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে বাংলাদেশ যেন চীনের বলয়ে চলে না যায়, সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তারা আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী। আর এই সমস্ত মিলিয়ে বাংলাদেশ চীনের বলয় থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর রাষ্ট্রদূত বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। চীনের পদস্থ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গেছেন। কিন্তু তারপরও চীন যে সমস্ত প্রকল্পর প্রস্তাব দিচ্ছে সে সমস্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকার ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করছে। এর ফলে অনেকে মনে করছেন যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই তিমাত্রিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে চীনা বলয় থেকে রেবিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তবে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক একেবারে বন্ধ করার মতো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কখনো যাবে না সেটি স্পষ্ট। বরং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের একটা সীমা রেখা টেনে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই নীতিতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭