ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের তিন প্রশ্ন


প্রকাশ: 24/02/2024


Thumbnail

বিএনপির তিন নেতার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আজ বিকেল তিনটায় ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে বৈঠক করেছে।  বিএনপির তিন প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ। এই বৈঠকে রুমিন ফারহানাকে নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে নানারকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দল বিএনপির কাছে তিনটি সুনির্দিষ্ট বিষয় জানতে চেয়েছে। 

প্রথমত, বিএনপি কেন ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করল। এর জবাবে বিএনপি তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপির নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অতীত অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এবং পক্ষপাতপূর্ণ নির্বাচনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

বিএনপির কাছে দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল যে, বিএনপি কেন ২৮ অক্টোবর সহিংসতা এবং জ্বালাও পোড়াও এর রাজনীতির পথ বেছে নিল। এর জবাবে বিএনপি যথারীতি তাদের পুরনো অবস্থান ব্যক্ত করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ২৮ অক্টোবর বিএনপির কোনো তাণ্ডব বা নাশকতা করেনি। সরকারই পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন রকম অঘটন ঘটিয়ে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিয়েছে এবং এই ঘটনার জন্য বিএনপি দায়ী নয়।

বিএনপির নেতারা দাবি করেছেন যে, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করে। ২৮ অক্টোবরের আগে থেকে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিল। বিএনপি যদি সহিংস আন্দোলনই করবে তাহলে কেন আগে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করল? ২৮ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাস বা সহিংসতা করার কোন পরিকল্পনা ছিল না বলেও তারা দাবি করেছেন।  

বিএনপির কাছে তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, এখন তারা কী করবে? বিএনপির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে স্বীকার করে না। জনগণ এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এটা একতরফা দামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে তাদের নেতারা দাবি করেছেন এবং এই নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারা আরও সংকুচিত হচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক ধারা উত্তরণের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলেও তারা দাবি করেন।  

বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, এই নির্বাচনকে যদি স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।   এ ছাড়াও এই বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দল বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারা জীবনের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছেন। একইভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কারাগারে তার অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন।

বিএনপির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে এই বৈঠকে জানানো হয়েছে, বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী বিনা বিচারে আটক রয়েছেন এবং তারা
মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়াও বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হয়রানির অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধি দল বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে শুধু তাদের বক্তব্য শুনেছেন। তাদের নিজেদের অবস্থানের কথা তেমন একটি বলেননি। তবে মার্কিন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে মানবাধিকার গণতন্ত্র, সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের আগের অবস্থান এখনও অব্যাহত রেখে আছে বলেও দাবি করেছেন। তবে বিএনপি যে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে সেই তিনটি প্রশ্ন মার্কিন প্রতিনিধিদের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়েছে সেই প্রশ্নও রয়েছে।  উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি করে আসছিল এবং এই নির্বাচনের জন্য তারা সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবর সন্ত্রাসী ঘটনার পর আস্তে আস্তে বিএনপির ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে পশ্চিমা বিশ্ব। এরকম একটি প্রেক্ষাপটে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।   নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা ইতোমধ্যে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশের নির্বাচনকে তারা ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে রেখেছে।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭