ইনসাইড ইকোনমি

বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, সফরে এলেন প্রতিনিধিরা


প্রকাশ: 25/02/2024


Thumbnail

বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিশ্বব্যাংক। মূলত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৈশ্বিক অবকাঠামো বাস্তবায়ন এবং গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে খারাপ পরিস্থিতিতেও আগের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বজায় রাখার সাফল্যেই এমন কদর।

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এই সম্পর্ক ৫০ বছরে বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ অনেক কর্তাব্যক্তিই সফর করেছেন। এরই অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অ্যানা বেজার্ডও বাংলাদেশ সফর করছেন। তিনিও বাংলাদেশের ঋণমান সক্ষমতা ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভিভূত এবং আগামীতে দ্বিপক্ষীয় সহায়তা নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতেই তার এই ঢাকা সফর বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এক দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছান বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অ্যানা বেজার্ড। সফরকালে তার আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং অন্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার।

তথ্যসূত্রগুলো বলছে, গত দুই-তিন বছরের নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি এবং পাইপলাইনে থাকা অর্থের ছাড় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে নেওয়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকারী প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করলেই তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। বর্তমানে বিশ্বের নিম্ন আয়ের ৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে তাদের ঋণ কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি।

বেসরকারি আর্থিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের পরিধি বাড়িয়েছে। বিশ্বের বাজারে তাদের সাফল্য দেখাতে হয়। তারাও বিশ্বের বাজার থেকেই টাকা তোলে। সেখানে যার ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা বেশি এবং উন্নয়ন চাহিদাও বেশি, বিশ্বব্যাংকের কাছে তার গুরুত্বও বেশি।

বিশ্বব্যাংক সূত্র বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) সমর্থিত বৃহত্তম কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর আওতায় বর্তমানে দেশের বিভিন্ন খাতে ১৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৫৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার সবই এসেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। এর মধ্যদিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, আরও বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী থাকলেও স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করেছে। ১৯৭১-৭২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫২ বছরে বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশ ঋণ পেয়েছে ৭৯.৮২৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে ২৪.৫৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা শতাংশের হারে বাংলাদেশের মোট ঋণের ৩০.৮০ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সামনে এখন কয়েকটি ভিশন রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৬ সালে নভেম্বরে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচির (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় রয়েছে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে ৫৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন রয়েছে। এ ছাড়া ‘স্মার্ট বাংলাদেশ আইসিটি ২০৪১ মাস্টারপ্ল্যান’ অনুসারে এর চারটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটির আলোকে সরকার ৪০টির বেশি প্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়েছে। সব মিলে আগামী দিনের বাংলাদেশের বেশিরভাগ উন্নয়ন উদ্যোগেই বিশ্বব্যাংক সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে। তাদের আগ্রহ বাড়ছে। তার নেপথ্য কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৈশ্বিক অবকাঠামো বাস্তবায়নে সাফল্যের সূত্র ধরেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্জাগরণ হয়েছে। তদুপরি বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যখন গোটা বিশ্ব স্থবির, বাংলাদেশও খুব খারাপ সময় পার করছে—ঠিক তখনো আগের ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ সক্ষমতা হারায়নি। হয়তো এসব কারণেই সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ কম। তবে বাংলাদেশে এখনো উন্নয়ন ক্ষুধা প্রকট। ফলে বাংলাদেশেরও বিশ্বব্যাংককে আগামীতে প্রয়োজন হবে বলেও স্বীকার করেন তারা।




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭