ইনসাইড থট

পিলখানা ট্র্যাজেডি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব


প্রকাশ: 25/02/2024


Thumbnail

আজ থেকে ১৫ বছর আগে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি (২০০৯) বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এটি ছিল জাতির জীবনের অন্যতম কলঙ্কিত অধ্যায়। সেসময় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সাহসী ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ কঠিন সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃসহ অত্যাচার, অনাচার এবং দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষ নিজের অধিকার আদায়ের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বজন প্রশংসিত নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে মহাজোটকে দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট দেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার মাত্র ৪৭ দিনের মাথায় পিলখানার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ওই বীভৎস ঘটনায় সর্বমোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। যার মধ্যে ৫৭ জন ছিলেন দেশের মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। এটি সহজে অনুমান করা যায় যে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী অপশক্তি নতুন সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্যই এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল।

২০১৩ সালে তার রায় ঘোষিত হওয়ার মধ্য দিয়ে, ইতিহাসের বীভৎসতম হত্যাকাণ্ডের কলঙ্ক মোচন হয়েছে। পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। বিএনপির নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টু ও স্থানীয় নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়েছে ২৬২ জনের। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় খালাস পেয়েছে ২৭১ জন। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর সরকার কালবিলম্ব না করে তিন পর্যায়ে ওই ঘটনার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে। এগুলো হলো- বিডিআর কর্তৃক তদন্ত, সেনাবাহিনী কর্তৃক তদন্ত এবং জাতীয় তদন্ত। তদন্ত শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি উত্থাপিত হয়। দাবিসমূহের মধ্যে একটি দাবি ছিল বিদ্রোহের বিচার সামরিক আইনে করা। শেখ হাসিনা সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সেনা কর্মকর্তাদের সব দাবি পূরণ করেছেন। একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়াকে সর্বপ্রকার বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য ১৭ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬-এর অধীনে সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স প্রেরণ করেন। ১৯ আগস্ট ২০০৯ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ১০ জন সিনিয়র আইনজীবীকে এমিকাস কিউরি নিয়োগ করা হয়। দীর্ঘ বিচার ও রায় শেষে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

পৃথিবীর ইতিহাসে আসামির সংখ্যা বিবেচনায় এত বড় বিচার কার্যক্রম কোথাও কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। সঙ্গত কারণেই এই বিচারকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত করার লক্ষ্যে কিছুটা সময় লেগেছে। এরই সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট এই বিচার বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে নানাবিধ অপপ্রচার চালিয়েছে। এমনকি তারা ক্ষমতায় গেলে বিজিবি-এর নাম পরিবর্তন করে আগের নাম এবং পোশাক বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বলেও জানা যায়। বিজিবিতে ভবিষ্যতে যে কোনো প্রকার বিদ্রোহ বন্ধের জন্য বর্তমান সরকার ‘বিজিবি এ্যাক্ট-২০১০’ সংসদে পাস করেছে, যা আর্মি এ্যাক্টের অনুরূপ। এই আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপি-জামায়াত জোট আজও বিডিআরের বিচার-সংক্রান্ত বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী এবং দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চক্রান্তে জড়িত। তাদের অনেকেই ওই সময় সেনা বিধি ৫ মোতাবেক সেনা আইনে এ বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালীন রহস্যজনক অবস্থান অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। বিএনপি শাসনামলে ১৯৭৭-১৯৮১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২১টি সামরিক অভ্যুত্থানে ১২০০’র বেশি সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য নিহত হলেও এসব অভ্যুত্থানের কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এমনকি অনেক মামলার নথিও গায়েব হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বিডিআর হত্যাযজ্ঞ পরিস্থিতি সেদিন দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। অপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে সম্মানিত করার প্রতিজ্ঞাও রয়েছে তাদের। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের নেতৃত্বে গণতন্ত্র নতুন করে বিকশিত হওয়ার সময় চক্রান্তকারীদের পিলখানা হত্যাযজ্ঞ দেশের ইতিহাসে মর্মন্তুদ ঘটনা। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দেড় মাসের মাথায় এই বর্বরোচিত ঘটনা কিসের আলামত ছিল? সেনাবাহিনীর ৫৭ কর্মকর্তা হত্যার শিকার হবার পরেও গোটা ফোর্স ধৈর্য ধারণ করেছেন; ন্যায় বিচারের অপেক্ষা করেছেন। বর্তমান সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর এরচেয়ে বড় অবদান আর কি হতে পারে? গত আমলে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আরো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এসব কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা থেকে সম্ভব হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ বিডিআরদের উদ্দেশ্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়- ‘আপনারা জানেন, গতকাল (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমি অত্যন্ত মর্মাহত। আত্মঘাতী এই হানাহানিতে জীবন দিতে হয় আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা, বিডিআর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের। এ প্রাণহানির ঘটনায় আমি দারুণভাবে মর্মাহত এবং দুঃখিত। আমি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমার প্রশ্ন, কার বুকে গুলি চালাবেন? তারা তো আপনারই ভাই। ভাই হয়ে ভাইয়ের বুকে গুলি করবেন না। আপনার বোনকে বিধবা করবেন না। আমরা আপনাদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। এমন পথ নেবেন না যে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। আমাকে দেশের স্বার্থে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবেন না। মনে রাখবেন, সংঘাত আরো সংঘাত বাড়ায়। আপনারা সংযত হোন। অস্ত্র সমর্পণ করুন। আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না, আমি আশ্বস্ত করছি।’

প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের পুরো ভাষণ জুড়ে ছড়িয়ে আছে নিহতদের জন্য শোক আর তাদের স্বজনদের জন্য কাতরতা। ভাষণটির শেষাংশে তিনি বিডিআর হানাদারদের কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি করেছেন যেমন, তেমনি বারবার সেনা পরিবারের ক্ষতির কথা স্মরণ করেছেন। এর চেয়ে মানবিক দলিল আর কি হতে পারে? ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে পিলখানার তাণ্ডবের খবর পেয়ে তিনি সংকট সমাধানে নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, নিজের দল ও মহাজোটের নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশের আইজি, র্যাবের ডিজিসহ আরো অনেকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। সকলের পরামর্শের ভিত্তিতেই প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আজমকে পিলখানায় প্রেরণ করা হয়। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেত্রীর নির্দেশে সংকট নিরসনে প্রচেষ্টা চালান। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনসহ আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বেশ কয়েকজন নেতা বর্বর বিডিআর জওয়ানদের ভয়ে ভীত না হয়ে পিলখানায় ঢুকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করেন সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারদের। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, কৌশল ও দূরদর্শী নেতৃত্ব, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানদের আন্তরিক সহযোগিতায় অবসান ঘটে তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের।

বড় ধরনের রক্তপাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করলেও শেখ হাসিনার দায়িত্ব তখনো শেষ হয়নি। কঠিন শোকের মধ্যেও সমগ্র সেনাবাহিনীর সদস্যরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রতিশোধ স্পৃহায় মেতে ওঠেননি নেত্রীর প্রতি আস্থার কারণে। আর তাদের দেশপ্রেম ও সংযমের কথা দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলেই তিনি মার্চের প্রথম দিন সেনাকুঞ্জে সেনা-কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়ে তাদের ক্ষোভের প্রশমন করেন। সেনাকুঞ্জের এই সাক্ষাতের ঘটনা নিয়ে বিরুদ্ধ পক্ষ ইন্টারনেটে নানা অপপ্রচার চালায় এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত জীবনের শোকের কথা বলে সেদিন উপস্থিত সেনাদের প্রাথমিক বিভ্রান্তির অবসান করেছিলেন। তবে সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিক্ষুব্ধ অফিসারদের আচরণ শৃঙ্খলা পরিপন্থী হলেও শেখ হাসিনার পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতায় তা বীভৎস হয়ে ওঠেনি। বরং নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকারের নির্দেশকে অসীম মর্যাদা দিয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তারা। সেনাকুঞ্জে তাদের চিৎকার ও ক্রন্দনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেদিন শোকের প্রকাশ দেখেছিলেন।

মূলত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নৃশংস বিডিআর বিদ্রোহের কারণে এ বাহিনীর পুনর্গঠনের দাবি ওঠে। ২০০৯ সাল থেকেই সরকার দ্রুততার সঙ্গে বিডিআরকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিজিবিকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ‘বর্ডার গার্ড আইন ২০১০’ সংসদে পাস করা হয়েছে। ফলে বিডিআর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। নতুন পোশাক, নতুন নাম এবং সংশোধিত আইন নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান আবারো দৃঢ় পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে মাথা উঁচু করে। পুনর্গঠনের আওতায় বিজিবির ৩৬ ব্যাটালিয়ন বিজিবি অবলুপ্ত করা হয়েছে ২০১৩-এর ১৫ জুলাই এবং ১৩ ব্যাটালিয়ন বিজিবিকে ২৫ আগস্ট অবলুপ্ত করা হয়। এর আগে ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ২৪ ব্যাটালিয়নকে (পিলখানায় অবস্থিত) অবলুপ্ত করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে চারটি অঞ্চল, চারটি সেক্টর, চারটি অঞ্চল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এবং তিনটি বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের জন্য (বিয়ানীবাজার, রুমা ও বাবুছড়া) মোট ছয় হাজার ৩১৬টি পদের বিপরীতে লোক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাগাইহাট এবং কুলাউড়া বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের জন্য এক হাজার ৫২৪টি পদে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন সম্পন্ন হয়েছে। পুনর্গঠনে পাল্টে গেছে বিজিবির প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কাঠামো। পাশাপাশি বেড়েছে জওয়ানদের সুযোগ-সুবিধাও। এখন বিজিবি সব সদস্যই সীমান্ত ভাতা পাচ্ছে। একই সঙ্গে জওয়ানদের পরিবারের মাসিক জ্বালানি খরচও বাড়ানো হয়েছে ৩ গুণ। বাড়ানো হয়েছে মসলা ভাতার পরিমাণও। পুনর্গঠনের আলোকে বিজিবিকে ৪টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এসব অঞ্চলের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের সদর দফতর হয়েছে নওগাঁয়, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সদর দফতর যশোর, উত্তর-পূর্ব সদর দফতর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সদর দফতর চট্টগ্রাম। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা আঞ্চলিক সদর দফতরের প্রধান। তাছাড়া নতুনভাবে তৈরি ১১টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে সদর দফতর করা হয়েছে। বিজিবির পুনর্গঠন প্রস্তাবের আলোকে বেশকিছু সংস্কারমূলক কাজে হাত দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিজিবির পুনর্গঠনে জওয়ানদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জওয়ানদের রেশন ও অন্যান্য ভাতাও। সীমান্ত ভাতা অনুমোদিত হওয়ায় এখন থেকে সব বিজিবি সদস্যই মাসিক ৩৩৮ টাকা ভাতা পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে জওয়ানদের রেশন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে শতভাগ। বাড়ানো হয়েছে যানবাহন ও চিকিৎসা সুবিধাও। এ জন্য বিজিবি সদস্যদের জন্য আরো ৩টি হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিজিবি সদস্যদের জাতিসংঘ মিশনে পাঠানোর বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে সরকার বিবেচনা করছে। পুনর্গঠনের আলোকে বিজিবি জওয়ানদের মানবাধিকার বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে।

তাছাড়া প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনাতেও আমূল পরিবর্তনের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে নতুন পাঠ্যসূচি। বিশেষ করে সীমান্ত সুরক্ষা, জওয়ানদের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিষয়াদি নিয়ে পৃথক ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া যুক্ত করা হয়েছে নারী ও শিশু পাচার রোধে করণীয়-সংক্রান্ত অধ্যায়ও। একইভাবে বিজিবি জওয়ানরা কীভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে সে বিষয়েও শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সীমান্তে অপারেশনাল কর্মকাণ্ড জোরদারের পাশাপাশি চোরাচালন, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য সরকার বিজিবি সদস্যদের ১৪শ মোটরসাইকেল সরবরাহ করেছে।

বিজিবি পুনর্গঠনের এই ব্যাপক তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক নিহত সেনা পরিবারদের জন্য নেয়া উদ্যোগগুলো উল্লেখের দাবি রাখে। বিজিবি হত্যাকাণ্ডে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে কয়েকটি তহবিল থেকে। প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুদান দশ লাখ টাকা; সেনাবাহিনী কল্যাণ তহবিল থেকে অনুদান পাঁচ লাখ; বিডিআর তহবিল থেকে অনুদান পঞ্চাশ হাজার; বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস কর্তৃক প্রতি বছর চার লাখ আশি হাজার টাকা হিসেবে অদ্যাবধি সর্বমোট বিগত ৫ বছরে চব্বিশ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

এ ছাড়া নিহত অফিসার পরিবারবর্গকে দুই লাখ টাকার ট্রাস্ট মিউচুয়্যাল ফান্ডের প্লেসমেন্ট শেয়ার প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পরিবার নিরাপত্তা প্রকল্প তহবিল, ডিএসওপি ফান্ড, কল্যাণ তহবিল থেকে অনুদান, মৃত্যু আনুতোষিক, ছুটির পরিবর্তে নগদ অর্থ, কম্যুটেশন এবং মাসিক পেনশন প্রদান করা হয়েছে। আর্থিক প্রণোদনা ও সহযোগিতার সঙ্গে অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজও করা হয়েছে নিহতদের পরিবারবর্গের জন্য। নিহত অফিসার পরিবারের ৩২ জন সদস্যকে চাকরি প্রদান করা হয়েছে, ৮৪ জন সদস্যকে (স্ত্রী/সন্তান) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং বিনা বেতনে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য ৩৭ জনকে মিরপুর ডিওএইচএসে প্লট দেয়া হয়েছে। ১০ জনকে মিরপুর ডিওএইচএসে ২টি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ ফ্ল্যাট প্রদানের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

নিহতদের পরিবারবর্গের দুধ কুপন কার্ড, সামরিক টেলিফোন সংযোগ এবং নিয়মানুযায়ী সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা, অপপ্রচার ও চক্রান্তকে অতিক্রম করে তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। যারা নানা ধূম্রজাল সৃষ্টি করে এ ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে তাদের অপপ্রয়াস ভেস্তে গেছে। বরং জাতি একটি কলঙ্কের দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে।

গত ১৫ বছরে পুনর্গঠিত বিজিবি অতীতের গ্লানি ভুলে নবউদ্যমে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। কেবল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সরকারের সদিচ্ছার কারণে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে; বাহিনীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০০৯ সালে পরিস্থিতি মোকাবিলা থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল অবধি সেনা ও বিজিবি’র জন্য যা কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে তার জন্য অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসার দাবি রাখেন।তাঁর সহানুভূতি, মমত্ববোধ ও আন্তরিকতার জন্যই শোকাহত পরিবারগুলো শোক কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।


(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু গবেষক, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,  বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭