প্রকাশ: 25/02/2024
সংসারে দারিদ্র্যের
কারণে এসএসসি পাস করতে না পারা হায়দার
আলী ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালান।
কিছুদিন পোশাক কারখানায় কাজ করে পরে গ্রামের বাড়িতে ফিরে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের
প্রাইভেট পড়াতেন তিনি। তখন শিক্ষকতা যোগ্যতা
নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ।
পণ করেন পড়াশোনা করে
বিএ পাস করবেন। ভর্তি
হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবিকার জন্য সারা দিন
ভ্যান চালান আর রাতে পড়াশোনা
করেন। সাত বছর পরিশ্রমের
পর বিএ পাস করে
তুচ্ছতাচ্ছিল্যের জবাব দিয়েছেন তিনি।
হায়দার
আলীর বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর
উপজেলার সেখমাটিয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে। পেশায় ভ্যানচালক হায়দার চার সন্তানের বাবা।
বড় মেয়েকে উচ্চমাধ্যমিকের পর বিয়ে দিয়েছেন।
একমাত্র ছেলে এসএসসি পাস
করেছে। অন্য দুই মেয়ে
নবম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে
পড়ছে।
সম্প্রতি
হায়দার আলীর হাতে বিএ
পাসের সনদ তুলে দেওয়ার
একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
ছড়িয়ে পড়ে। এর পর
থেকে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
স্বজন
ও এলাকাবাসী জানান, ১৯৭৯ সালে রামনগর
গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারে
হায়দার আলীর জন্ম। চার
বছর বয়সে বাবা কাঞ্চন
আলী খানের সঙ্গে খুলনায় চলে যান। দিনমজুর
বাবার আয়েই সংসার চলত।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা
মারা যান।
এরপর
মা মোমেনা বেগম সংসারের হাল
ধরেন। ১৯৯৪ সালে এসএসসি
পাস করে খুলনার খালিশপুরে
সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন
কলেজে ভর্তি হন হায়দার আলী।
কিন্তু অভাবের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।
হায়দার
আলী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের কারণে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালানো
শুরু করেন। পরে পোশাক কারাখানায়ও
চাকরি করেন।
২০০৬
সালে গ্রামের বাড়িতে ফিরে স্কুলের বাচ্চাদের
পড়ানো শুরু করেন। ২০১২
সালে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র
করে একজন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে
বলেন, ‘এসএসসি পাস করে লেখাপড়ার
কী বোঝ?’ এরপর সিদ্ধান্ত নেন
আবার পড়াশোনা শুরু করবেন। পণ
করেন ডিগ্রি পাস না করে
কাউকে প্রাইভেট পড়াবেন না।
২০১৩
সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউটোরিয়াল কেন্দ্র নাজিরপুর ডিগ্রি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন হায়দার আলী।
২০১৬ সালে জিপিএ ২
দশমিক ৮৩ পেয়ে এইচএসসি
পাস করেন। একই কলেজে বিএ
পাস কোর্সে ভর্তি হন। চার বছর
পর ২০২০ সালে উন্মুক্ত
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ দশমিক
৫৩ পেয়ে বিএ পাস
করেন। সম্প্রতি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পিরোজপুরের উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়
থেকে বিএ পাসের সনদ
হায়দার আলীর হাতে তুলে
দেওয়া হয়।
হায়দার
আলী বলেন, ‘আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা
নিয়ে একজন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন।
এরপর সিদ্ধান্ত নিই বিএ পাস
করব। জীবিকার জন্য ভ্যান চালাতে
শুরু করি। পাশাপাশি পড়াশোনা
চলে। সারা দিন ভ্যান
চালিয়ে রাতে পড়াশোনা করতাম।
মাঝেমধ্যে ক্লাস করতাম।
এভাবে
৭ বছর পড়াশোনা করে
এইচএসসি ও বিএ পাস
করেছি। এমএ পাস করার
ইচ্ছা আছে।’ তিনি বলেন, ভ্যান
চালিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে কষ্ট হয়, একটা
চাকরি পেলে ভালো হতো।
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়ার
বিষয়ে হায়দার আলী বলেন, ‘কয়েক
দিন আগে সনদ পেয়েছি।
তখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা আমার
হাতে সনদ তুলে দেওয়ার
সময় বলেন, “আপনার একটা ছবি তুলতে
চাই।” আমি তাঁর সঙ্গে
ছবি তুলি। পরে তিনি ফেসবুকে
সেই ছবি পোস্ট দিলে
তা ছড়িয়ে পড়ে।’
নাজিরপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম আলী শেখ বলেন, ‘আমি হায়দার আলীকে চিনি। তিনি আমাদের টিউটোরিয়াল কেন্দ্র থেকে বিএ পাস করেছেন। সম্প্রতি ফেসবুকে তাঁর বিএ পাস নিয়ে অনেকে প্রশংসামূলক পোস্ট, শেয়ার ও কমেন্ট করেছেন। পিরোজপুরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ কোর্স চালু নেই। এ জন্য তাঁকে বরিশালে যোগাযোগ করতে হবে।’
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭