ইনসাইড বাংলাদেশ

আওয়ামী বিরোধিতাকারীরাই কি দেশে একমাত্র সুশীল?


প্রকাশ: 25/02/2024


Thumbnail

সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আজ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে গুলশানে মার্কিন ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন লা-ফেইভ এর বাসভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে সুশীল সমাজের যে প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন তাদেরকে নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস যাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তারা একতরফা, পক্ষপাতপূর্ণ এবং অন্ধ আওয়ামী বিরোধী। এই সমস্ত ব্যক্তিরাই শুধু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি কীভাবে হয়? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

বাংলাদেশে বহু নিরপেক্ষ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, আছেন মুক্ত চিন্তার মানুষ। তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কিছু দলকানা আওয়ামী বিরোধী ব্যক্তিদেরকে ডেকে বৈঠক করার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন দূতাবাসের ভেতরে কিছু জামায়াত-বিএনপিপন্থী বাঙালি কর্মকর্তা রয়েছে তাদের তৎপরতার এটি একটি নিদর্শন বলেই অনেকে মনে করছেন। 

এই বৈঠকে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক জিল্লুর রহমান, অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. আমিনা মহসীন, ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী মানবাধিকার কর্মী শিরিন হক ও অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এরা প্রত্যেকেই বিতর্কিত এবং সরকারের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা, অপতথ্য ইত্যাদি নানা কিছু প্রচারে সিদ্ধহস্ত।

জিল্লুর রহমান কোন বিবেচনায় সাংবাদিক, এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তৃতীয় মাত্রা নামক একটি অনুষ্ঠান করলেই কি সাংবাদিক হওয়া যায়? বাংলাদেশের সাংবাদিকতার কেন্দ্রভূমি হল জাতীয় প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। বাংলাদেশে অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক রয়েছেন যারা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানিত। সেই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে না ডেকে শুধুমাত্র তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক জিল্লুর রহমানকে সুশীল বানিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্য কি? সেই প্রশ্ন উঠেছে। 

অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ইতোমধ্যে অসত্য, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য দেওয়ার জন্য আলোচিত। হেফাজতের ঘটনার সময় তিনি যে মৃত্যুর সংখ্যা বলেছিলেন তা নিজেই প্রমাণ করতে পারেননি। এ ধরনের অসত্য মিথ্যাচার করা এই ব্যক্তিটির সঙ্গে বিএনপি-জামাতের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আদিলুর রহমান খান মানবাধিকার কর্মী হিসেবে সেখানে কেমন করে যান? সে প্রশ্নও উঠেছে। 

বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান ড. মীজানুর রহমান অন্যতম। এছাড়াও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা অনেক প্রথিতযশা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত আদিলুর রহমান খানকে ডাকাটা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. আমেনা মহসীনকে ডাকা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ইমতিয়াজের মতো অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তাদেরকে বাদ দিয়ে আমেনা মহসীনকে ডাকা হয়েছে। 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একজন বিতর্কিত অর্থনীতিবিদ। তার একমাত্র কাজ হল সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে তিনি এমন সব অসত্য, ভিত্তিহীন, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন যার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। এই দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বাংলাদেশের পদ্মা সেতু হবে না বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের আগে তিনি মনগড়া যে সমস্ত জ্যোতিষীর মতো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তার সবই ব্যর্থ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। এই সমস্ত ব্যক্তিদের একটাই কাজ। তা হলো, আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা। তারা কারও এজেন্ট হয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেন বলেই অনেক মানুষ মনে করে। 

এই নিরপেক্ষ সুধীজনদের বাদ দিয়ে এই সমস্ত ব্যক্তিদের নিরপেক্ষ সুশীল হিসাবে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি তাহলে আবার শুধুমাত্র দলকানা, অন্ধ, পক্ষপাতপূর্ণ তথাকথিত কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির বক্তব্য নিয়েই বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছে?

বহু গণমান্য ব্যক্তি রয়েছেন যারা মুক্ত চিন্তার অধিকারী, দলনিরপেক্ষ। তাদের বক্তব্য গ্রহণ না করেই এই সমস্ত বিতর্কিতদের মতামত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল হিসেব-নিকেশ কষতে যাচ্ছে? 

প্রসঙ্গত যে, এই বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক  রিয়ার এডমিরাল এইলিন লাউবেখার, উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার এবং ইউএসএআইডির সহকারী পরিচালক মাইকেল শিফার। বৈঠনে নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের অবস্থান কেমন তা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন তারা কি বলবেন তা পূর্ব অনুমোদিত। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে যে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যে বার্তা নির্বাচনের পর থেকে দিচ্ছে, তা আবার বিভ্রান্তির চোরাবালিতে আটকে পরতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭