কালার ইনসাইড

৩০ বছর পরও দিব্যা ভারতীর মৃত্যু এক অজানা রহস্য


প্রকাশ: 25/02/2024


Thumbnail

নব্বই দশকে ভিউকার্ড ও পোস্টার, কিংবা পাড়া-মহল্লায় বই-খাতা একটা মুখ খুব দেখা যেত, তিনি বলিউড অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। ছেলেদের মানিব্যাগে, আয়নার পেছনে, সেলুনে কিংবা মেলায় অথবা ভিসিআরের ক্যাসেটের কভারে থাকত তার লাস্যময়ী ছবি।

এক দীর্ঘশ্বাসের অভিমানে ঝরে যাওয়া ফুলের মত মাত্র তিন বছরের অভিনয় করে জনপ্রিয়তা শীর্ষে থাকা অবস্থায় পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি। ১৯৭৪ সালের আজকের এই দিনে দিব্যার জন্ম। তাই আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) তার ৫০ পূর্ণ হতো। কিন্তু মহাকাল সে সুযোগ দেয়নি তাকে। বরং মাত্র তিন বছরের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার রেখে ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল ১৯ বছর বয়সে অকালেই চলে গিয়েছিলেন দিব্যা।

দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর ৩০ বছর পরও মৃত্যুও আজও এক অজানা রহস্য। শুধুই কি দুর্ঘটনা! নাকি এর পেছনে ছিল কোনো ষড়যন্ত্র? উত্তর মেলেনি আজও।

দিব্যা ভারতী ছিলেন নব্বই দশকের ভিসিআর আর পোস্টারের সে যুগে বলিউডে নারী তারকার নতুন আইকন। সে যুগ শেষ হয়ে এসেছে অ্যান্ড্রয়েড-আইফোনের যুগ কিংবা টিকটক, লাইকির যুগ।

তারকাদের বড় ‘ঠিকানা’ এখন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম। এই যুগে দিব্যা নেই। তবে আজও দারুণ স্পষ্ট দিব্যার নামটি।

আজ সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে দিব্যাকে দেখা যাচ্ছে। সেই মন ভুলানো হাসি মাখা সৃতিগুলো।

ভারতীয় পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিব্যা ভারতীর মৃত্যু ছিল দুর্ঘটনা। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মদ্যপ অবস্থায় পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দার রেলিং ধরে হাঁটছিলেন দিব্যা, পা পিছলে পড়ে মৃত্যু হয় তার। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন, মাথায় গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। যদিও দুর্ঘটনার এই প্রতিবেদনকে আজও মেনে নিতে পারেনি ভক্তরা।

দিব্যা ভারতীর মৃত্যু নিয়ে বলিউডের অন্দরেও অনেক গল্প শোনা যায়। অনেকের বলছে, এটা ছিল ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন। কেউ কেউ মনে করেন, আত্মহত্যা করেছিলেন এই অভিনেত্রী। এই তর্ক চলছে বছরের পর বছর।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।

ভারতের স্থানীয় সাংবাদিক রোশমিলা ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘সেদিনের কথা আমার মনে আছে। আমি মাত্র অফিসে ঢুকেছি, যখন খবর এল দিব্যা ভারতীকে গুলি করে মারা হয়েছে। আমার বিশ্বাস হয়নি। মজা করে প্রশ্ন করেছিলাম, “কে ছবি তুলেছে, গৌতম না রাকেশ?” আমার সহকর্মী জানিয়েছিলেন, কেউ ছবি তোলেননি। বলেছিলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র আছে এই ঘটনার সঙ্গে। এরপর খোঁজ নিয়ে স্পষ্ট জানাই, এটা গুজব; কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে খবর আসে দিব্যা ভারতী আর নেই।’

রোশমিলা আরও লিখেছেন, ‘আমরা জানতে পারি, দিব্যা তাঁর বাড়ির ব্যালকনি থেকে পা পিছলে পড়ে গেছেন। গুঞ্জন শোনা যায়, আত্মহত্যা, এমনকি খুনেরও। তবে শেষমেশ পুলিশ ফাইলে তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে একটা সাধারণ দুর্ঘটনা বলেই উল্লেখ করে মামলার ফাইল চূড়ান্ত করে।’

দিব্যা ভারতী ১৯৮৮ সালে ‘গুনাহো কা দেবতা’ ছবিতে দিব্যার অভিনয়ের কথা হয়। কিন্তু শেষ অবধি তিনি বাদ পড়েন। কীর্তি কুমার তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন ‘রাধা কা সংগম’ ছবির জন্য। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেই সুযোগ চলে যায় জুহি চাওলার কাছে। তারপর কিছুটা নিজের অনিচ্ছায় তিনি শুরু করেন তেলুগু ছবি ‘বব্বিলি রাজা’-এর শুটিং।

১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বব্বিলি রাজা’ এখন অবধি সফল তেলেগু ছবির মধ্যে অন্যতম। প্রথম ছবিতেই আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি দিব্যাকে। প্রথম দুই বছর তেলেগু ও তামিল ছবিতে অভিনয়ের পরে ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করেন হিন্দি ছবি ক্যারিয়ার। শুধু ১৯৯২ সালেই ১২টি ছবি মুক্তি পায় তার।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সময় দিব্যা ভারতীর পর্দায় উপস্থিতি এতটাই আবেদনময় ছিল দর্শকের কাছে যে এই অষ্টাদশী নায়িকাকে দিয়ে ছবি স্বাক্ষর করাতে প্রযোজকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল।
শোনা যায়, ১৯৯২ সালেই দিব্যা ভারতীর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার। ভারাসোভার তুলসী অ্যাপার্টমেন্টে নাদিয়াদওয়ালাদের ফ্ল্যাটেই গোপনে বিয়ে করেন দুজনে। ৩০ বছর কেটে গেছে; অথচ আজও সাজিদের পরিবারের একজন হয়েই যেন আছেন দিব্যা ভারতী। কয়েক বছর আগে এই খবর জানালেন সাজিদেরই পরের স্ত্রী ওয়ার্দা নাদিয়াদওয়ালা।

ওয়ার্দা ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দিব্যা আমাদের জীবনের একটি অংশ। সাজিদ এখনো ভোলেনি তাকে।’ শুধু কি তা-ই, ওয়ার্দার সঙ্গে সাজিদের প্রথম সাক্ষাতের বিষয়টিও কাকতালীয়ভাবে দিব্যাকে কেন্দ্র করে।
ওয়ার্দা আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, বিস্ময়করভাবে এটাই সত্য যে আমাদের দুজনের প্রথম দেখা হওয়ার তিনিই ছিলেন মাধ্যম। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সাজিদের একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েই পরিচয় হয়েছিল। অবশ্য সাজিদ, দিব্যার বাবা, আমার শ্বশুর আমাকে বলতেন, আমি নাকি দেখতে একেবারেই দিব্যার মতো, একই ব্যবহার, একই আচরণ।’

দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর সময় পাঁচ থেকে ছয়টি ছবি অসমাপ্ত ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজকদের নতুন নায়িকাদের নিয়ে নতুন করে শুটিং করে ছবি শেষ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ‘লাডলা’, যা নতুন করে শুটিং করা হয় শ্রীদেবীকে নিয়ে। রয়েছে, ‘মোহরা’, ‘কর্তব্য’, ‘বিজয়পথ’, ‘দিলওয়ালে’ ও ‘আন্দোলন’। আরও কয়েকটি বড় ব্যানারের ছবির কাজও বন্ধ হয়ে যায়, যেগুলোয় অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত ছিল।

বলিউড বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, মাত্র তিন বছরে যে অভিনেত্রী সাফল্যের এই উচ্চতায় উঠতে পারেন, বেঁচে থাকলে হয়তো আজকের দিনে তিনি মাধুরী অথবা শ্রীদেবীর মতোই হয়ে উঠতেন বলিউডের আরেক কিংবদন্তি নায়িকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিব্যার অকালমৃত্যু না হলে শ্রীদেবী, জুহি ও মাধুরী দীক্ষিতদের হিসাব-নিকাশটা অন্য রকম হতো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭