ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের হাতেই জাপার চাবি?


প্রকাশ: 25/02/2024


Thumbnail

জাতীয় পার্টির বিরোধ কমছেই না, বরং আস্তে আস্তে প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনে করেন যে, এই বিরোধের পিছনে কলকাঠি নাড়ছে সরকার। জাতীয় পার্টির এই নেতা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় বলেছেন যে, সরকার চায় না জাতীয় পার্টি সবল হোক এবং একটি জোরালো বিরোধী দল হিসাবে সংসদে অবস্থান রাখুক। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টিকে নীরবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে জাতীয় পার্টিকে ক্রমশ দুর্বল করে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। 

তবে নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় পার্টির দুই অংশের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। জাতীয় পার্টির মূল চাবি আসলে আওয়ামী লীগের হাতে। জাতীয় পার্টির জিএম কাদের পন্থী হিসেবে যারা পরিচিত, তাদের একাধিক নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা বিভিন্ন পরামর্শ করছেন, আওয়ামী লীগের পরামর্শে তাদের করণীয় তারা নির্ধারণ করছেন। এদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অন্যতম বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এদের কারণে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

জিএম কাদেরের কোনো একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না জাতীয় পার্টিতে। দলের সিনিয়র নেতাদের আস্থায় নিয়ে তাকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর এই সিনিয়র নেতারা যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে বা গোপনে হোক আওয়ামী লীগের পরামর্শ গ্রহণ করে এমন গুঞ্জন জাতীয় পার্টিতে রয়েছে। জিএম কাদের নিজেও বলেছেন যে জাতীয় পার্টির মধ্যে সরকারের এজেন্ট রয়েছে। 

অন্যদিকে রওশন এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতার খবর নতুন নয়। রওশন এরশাদের প্রতি আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। কারণ ২০১৪ নির্বাচনে যখন এরশাদ নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঠিক সেই সময় রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। রওশন এরশাদের কারণেই শেষ পর্যন্ত ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করতে পেরেছিল। আর এ কারণেই রওশন এরশাদের প্রতি আওয়ামী লীগের আলাদা পক্ষপাত রয়েছে। এখন যখন রওশন এরশাদ নতুন করে জাতীয় পার্টি করতে চাইছেন, তখন সরকার তার প্রতি সমর্থন না দিলেও তার বিরুদ্ধচারণ করছেন না। রওশন এরশাদ পন্থীরা জাতীয় পার্টির বিভিন্ন মহলে এমন একটি ধারণা দিতে চেষ্টা করছেন যে, রওশন এরশাদের সাথে সক্রিয়তার পিছনে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রচ্ছন্ন ছায়ায় রওশন এরশাদ এ সব করছেন। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য অস্বীকার করা হয়েছে। তবে রওশন পন্থীদের মধ্যে যারা সক্রিয় তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। 

জাতীয় পার্টি নিয়ে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য কি? আওয়ামী লীগ কি সত্যি সত্যি জাতীয় পার্টিকে বিলুপ্ত করতে চায় বা জাতীয় পার্টিকে খণ্ডিত, দুর্বল করতে চায়? আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন আগ্রহই নেই। জাতীয় পার্টিতে যেটি হচ্ছে তা হল দলটির অভ্যন্তরীণ বিরোধ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কোন অবস্থান নেই। দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এবং আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করতে চাইছে কর্মী সমর্থকদের হাতে রাখার জন্য।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, জাতীয় পার্টির কর্মীরা নানারকম সুযোগ সুুবিধা চান। আর এই সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা একটি বড় ব্যাপার। আর তাই জাতীয় পার্টির দুই পক্ষই মনে করছেন যে, সরকারের সঙ্গে যদি তাদের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখানো হয় তাহলে জাতীয় পার্টিতে বেশির ভাগ কর্মীরা থাকবে। তবে জাতীয় পার্টিতে কিছু কিছু নেতা মনে করেন যে, জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করে ব্যতিব্যস্ত রাখা সরকারের কৌশলের একটি অংশ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭