ইনসাইড বাংলাদেশ

লন্ডন বিলাস: সুনসান নীরবতা


প্রকাশ: 25/02/2024


Thumbnail

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশের কোনো মহলের কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের এক সাবেক মন্ত্রী লন্ডনে দুই হাজার সাতশ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। এই সম্পদ তিনি কী ভাবে গড়েছেন? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

ব্লুমবার্গের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। লন্ডনের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করে একজন সাবেক মন্ত্রী যুক্তরাজ্যে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। এমন খবরের পর বাংলাদেশের কোন মহল থেকে এ ব্যাপারে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি। 

বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভাবে একজন ব্যক্তি বছরে ১২ হাজার নিয়ে যেতে পারে। সেখানে সাবেক ভূমিমন্ত্রী কী ভাবে যুক্তরাজ্যে দুই হাজার সাতশ কোটি টাকার সম্পদ গড়লেন সেই প্রশ্নের উত্তর কেউ দেননি। এমনকী সাবেক মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউ বিদেশে বিনিয়োগের জন্যও অর্থ নিয়ে যেতে পারে না। কাজেই দুই হাজার সাতশ কোটি টাকা কোন পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ সম্পর্কে অবহিত কি না? যদি অবহিত না হয়ে থাকে অবৈধ পথে যদি অর্থ যেয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেন কি না? এই সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক মুখে কুলুপ এঁটেছেন। 

একই রকম অবস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের। দুর্নীতি দমন কমিশন অর্থপাচারের অভিযোগ এর আগে একাধিক মামলা করেছিল এবং বিদেশে যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন বিবৃতি বা বক্তব্য দেখা যায়নি। অন্যান্য সময় বিশেষ করে যখন ট্যাক্স হ্যাভেন রাষ্ট্রগুলোতে বিনিয়োগের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, তখন দুর্নীতি দমন কমিশন সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হলেও বলেছিল যে বিষয়টি তারা তদন্ত করবে।, তারা তালিকা যাবে। এমনকি যখন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার খবর প্রকাশিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে, তখনও দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, বিষয়টি তারা দেখবে এবং এই অর্থ কারা পাঠিয়েছে সে ব্যাপারে তারা তথ্য অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবে। যদিও পরবর্তীতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিন্তু এবার দুর্নীতি দমন কমিশনও এ ব্যাপারে কোন কথা বলছেন না। 

সাবেক ভূমিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের একজন নেতা, তিনি জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যও বটে। আর সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের এক ধরনের জবাবদিহিতার বিষয় আছে। এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের এই নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে, সে সম্পর্কেও আওয়ামী লীগের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 

একইভাবে একজন সংসদ সদস্য যখন সংসদ সদস্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তখন তাকে একটি হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। সেই হলফনামায় তার সম্পদের বিবরণীতে উল্লেখ করতে হয়। এই আলোচিত সংসদ সদস্য তার হলফনামায় তার বা তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি। ভুল হলফনামা দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই আলোচিত সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনও কোন কথাবার্তা বলেনি। হলফনামার সঙ্গে তার এই সম্পদের অসাঞ্জস্যতা নিয়ে তাকে কোন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়নি নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনের পর সবাই নিশ্চুপ। শুধুমাত্র আলাপ আলোচনা হচ্ছে ফিসফাস করে গোপনে অন্তরালে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭