ইনসাইড পলিটিক্স

আফরিনের সফরের পর আরও চাপমুক্ত আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 26/02/2024


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা। এই নির্বাচন বহির্বিশ্ব কতটুকু স্বীকৃতি দেবে, কতটুকু গ্রহণ করবে সেটি ছিল আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেব নিকেশের বিষয়। আর এই কারণেই এবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কোথাও যেন একতরফা নির্বাচন না হয়, কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হয় সে বিষয়টির দিকে কড়া নজর রেখেছিল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

নির্বাচনে জনগণ কত ভোট দিল বা জনগণের কাছে এই নির্বাচন কতটুকু ইতিবাচক হল তার চেয়েও আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগের আতঙ্ক ছিল।

নির্বাচনের আগে থেকেই ক্ষমতাসীন দল ভালো করেই জানত যে, এই নির্বাচনের পরপরই ভারত, চীন এবং রাশিয়া বাংলাদেশের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে এবং এই নির্বাচন নিয়ে তারা কোন নেতিবাচক মন্তব্য করবে না। মধ্যপ্রাচ্য নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে তেমন কোন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল না। নির্বাচনের পর যথারীতি তাই ঘটেছে। দেখার বিষয় ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের পর কী করে সেই পদক্ষেপগুলো দেখার। নির্বাচনের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বলা হয়েছিল যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও হয়নি, একতরফা নির্বাচন হয়েছে এবং এর পরপরই টিআইবির পক্ষ থেকে নির্বাচন সম্পর্কে একটি বিতর্কিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে অন্য রূপে দেখা যায়। নির্বাচনের পরপরই তিনি ছুটে যান বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকারে। তার আগেই ঘটে আসল ঘটনা। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের দিনই পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন বঙ্গভবনে এবং টানা চতুর্থবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাকে অভিনন্দন জানান। 

অনেকেই মনে করেছিলেন যে, এটি একটি ভদ্রতা সূচক অভিনন্দন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এই অভিনন্দন দিয়ে যাচাই করা ঠিক হবে না। এমনকি মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারটাকেও তারা কেউ বলার চেষ্টা করেছিলেন যে, এটি রুটিন ওয়ার্ক। এর মাধ্যমে মার্কিন অবস্থান বোঝা যাবে না। কিন্তু ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় এবং এগিয়ে নেওয়ার বার্তাটাকেই জোরালো করতে চায়। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির পর সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাংলাদেশের নির্বাচন যাই হোক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা মেনে নিয়েছে এবং এই মেনে নেওয়ার মাধ্যমে তারা এই দেশে বিশেষ করে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে চায়। এরকম একটি বার্তা আওয়ামী লীগের জন্য ছিল ইতিবাচক।

তবে তারা সবচেয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য কূটনীতিক কর্মকর্তাদের ঢাকা সফরের ওপর। কারণ এই সফরের মধ্য দিয়ে বিএনপি, সুশীল সমাজ ইত্যাদিরা নির্বাচনকে কীভাবে দেখে তার ব্যাখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা দেবে এবং সেই প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রতিনিধি দল কী ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করে সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছিল। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে নির্বাচন নিয়ে যদি নেতিবাচক মন্তব্য করত বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর কিংবা সুশীল সমাজের বৈঠকের পর যদি নতুন সরকারের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করত, সেটি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চাপ হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এক্ষেত্রে নতুন সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ সম্মান দেখিয়েছে। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে যে ধরনের সংযত থাকা উচিত, মার্কিন প্রতিনিধি দল তার চেয়ে বেশি সংযত থেকেছে এবং দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে।

বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের বৈঠক ছিল অত্যন্ত আন্তরিক এবং হৃদ্যতাপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আর এ সমস্ত ঘটনাগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে শঙ্কামুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচন নিয়ে তার উৎকণ্ঠাকে ঝেড়ে ফেলে দিল আনুষ্ঠানিকভাবে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭