ইনসাইড পলিটিক্স

যে কারণে আওয়ামী লীগকে বেছে নিল যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশ: 27/02/2024


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের পর এটা স্পষ্ট হল যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই—এই বার্তাটি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল। এই সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছে, বৈঠক করেছে বিএনপির সঙ্গে কিন্তু এই সমস্ত বৈঠক ছাপিয়ে সরকারের সঙ্গে হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক এবং দু দেশের ভুল বোঝাবুঝি অবসান ঘটিয়ে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তাটি প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ফলে এটা স্পষ্ট হল যে, আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো বিকল্প আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই। 

কেন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বেছে নিল? 

দুবছর আগে মনে হয়েছিল, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এই সরকার পরিবর্তনের জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ওপর তাদের নানামুখী চাপ ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু নির্বাচনের পর সেই অবস্থান পরিবর্তন ঘটল। কেন এই পরিবর্তন ঘটল—এ নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা একাধিক কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তাদের মতে; 

১. ভারতের অবস্থান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের নেতৃত্ব দিতে চায় ভারতকে এবং ভারতের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তার পরিকল্পনা সাজাতে চায়। ভারত যেহেতু আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করছে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করছে সে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প ভাবছে না। তারা আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছে।

২. বিরোধী দলগুলির দুর্বলতা: গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা মৌলিক অবস্থান তৈরি হয়েছে। তা হল তারা দেখছে যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিশেষ করে আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়, শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। কারণ শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোন বিকল্প শক্তির অবস্থান নেই। আর এই কারণেই তারা আওয়ামী লীগকে আবার বেছে নিয়েছে। 

৩. বিএনপির দুর্বলতা এবং নেতৃত্বের সংকট: বিএনপির সঙ্গে একটা সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং বিএনপিকে তারা এক ধরনের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছিল। কিন্তু।বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারকদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিএনপি আওয়ামী লীগের বিকল্প নয় এবং দেশ পরিচালনা করার জন্য বা সরকার পরিচালনার মতো নেতৃত্ব বিএনপিতে নেই। এ কারণে তারা আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখছে। 

৪. সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আন্তর্জাতিক এজেন্ডা হল সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা। সেক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা অনুভব করতে সক্ষম হয়েছে যে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তাহলে সেখানে জঙ্গিরা এবং সন্ত্রাসবাদ লালিত হবে। জঙ্গিরা এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চায় না। 

৫. চীনকে এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ করা: এই অঞ্চলে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বাংলাদেশকে কাছে নিতেই হবে। যদি শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধী অব্যাহত রাখত তাহলে বাংলাদেশ চীন-রাশিয়া-ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রাখত। আর তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখছে যে, চীনকে প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে রৈরিতা নয়, বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করাই উত্তম পথ। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭