ইনসাইড বাংলাদেশ

২১ সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে পটুয়াখালী জেলা যুবলীগ


প্রকাশ: 28/02/2024


Thumbnail

১৭ বছর পর সম্মেলন করেও পূর্ণতা দিতে পারেনি পটুয়াখালী জেলা যুবলীগকে। গত ২ বছর ধরে আংশিক কমিটি দিয়ে চলছে জেলা যুবলীগ। এর ফলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে জটলার পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। আর পদ প্রত্যাশীদের মাঝেও বিরাজ করছে হতাশা।

দেড়যুগ পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের সম্মেলন কমিটি ঘোষণা ছাড়াই শেষ হয়। আড়াই মাস পরে ঘোষণা করা হয় ১০১ সদস্যর মধ্যে ২১ জনের আংশিক কমিটি। যেখানে এ্যাডভোকেট সহিদুল ইসলাম সহিদকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট সৈয়দ সোহেলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছরের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। পুর্ণাঙ্গ কমিটির চারের একাংশের সেই কমিটি দিয়েই এখনো চলছে পটুয়াখালী জেলা যুবলীগ।

বর্তমান কমিটি থেকে পদ-বঞ্চিত একাধিক নেতারা মনে করছেন, তারপরেও জেলা যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী খুব আশাবাদী ছিলো এই কমিটির উপরে। সবাই ভেবেছিলো এই কমিটি সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। তবে নেতা-কর্মীদের সে আশা পূরণে ব্যর্থ জেলা কমিটি।

জেলা যুবলীগের কয়েকজন পদ-প্রত্যাশী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলা যুবলীগের পদ পেতে অনেকেই রাজনীতি বাদ দিয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতাদের দ্বারেদ্বারে ঘুরতে ঘুরতে এখন ক্লান্ত।

জেলা যুবলীগের একজন সহ-সভাপতি বলেন, জেলা যুবলীগের ১০১ জনের সাংগঠনিক কাজ চালাচ্ছেন এখন ২১ জনে। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড কমিটি গঠনতো দূরে থাক উপজেলা সম্মেলনই করতে পারিনি আমরা। সভাপতি থাকেন ঢাকায় আর সাধারন সম্পাদক ব্যস্ত তার ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে। সব মিলিয়ে যুবলীগের সাংগঠনিক অবস্থা অনেক খারাপ। 

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুবলীগের কার্যক্রম নিয়েও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এই নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ আসনের আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে যুবলীগের সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। অন্যান্য আসনের দলীয় প্রার্থীর পক্ষেও তেমন জোড়ালো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। চলমান পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনেও জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ শফিকুল ইসলামকে সমর্থন দিলে জেলা যুবলীগের সভাপতি সহিদুল ইসলাম সহিদ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সোহেল নেমেছেন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন আহমদের সাথে। 

জেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহানুর রহমান সুজন জানান, কেন্দ্রে পাঠানো প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে কয়েকজন বিতর্কিত লোকের নাম থাকায় কমিটি ঘোষনা হচ্ছেনা। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিচার বিশ্লেষন করছেন।

সূত্র জানায়, জেলা যুবলীগের এই আংশিক কমিটি জেলার কয়েকটি উপজেলা ও পৌরসভায় বর্ধিত সভা করলেও সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে আর কোন পদক্ষেপ নেই। জেলার আটটি উপজেলা ও চারটি পৌরশাখা যুবলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ১ যুগ। এরমধ্যে ১০ বছর পর রাঙ্গাবালী উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ও ৩০ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন করলেও এখনো কমিটি ঘোষণা দিতে পারেনি জেলা যুবলীগ। অন্যান্য উপজেলায়ও যুবলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে কবে তা জানেন না এই আংশিক কমিটির অনেকে। জেলার ৮৭ টি ইউনিয়নের আধিকাংশ ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিতে হাত দেওয়া হয়নি আওয়ামীলীগের এই ৪ মেয়াদের ক্ষমতামলে। কোন শাখার কমিটি আছে, কোন শাখার নেই তাও জানেন না জেলা যুবলীগের অনেকে। সব মিলিয় পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের এখন বেহাল অবস্থা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, পেছনে এতগুলো বছর যুবলীগের বেহাল অবস্থা ছিলো। কত প্রতিক্ষার পরে সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে এই কমিটি গঠন হয়েছিলো। আমরা সবাই আশাবাদী ছিলাম। তবে এই দুই বছরে তেমন কোন গতি দেখতে পাইনি সংগঠনের। দুই বছরে মাত্র ২ টি উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে তাও কমিটি এখনো দিতে পারেনি তারা। 

কেন উপজেলা কমিটি হচ্ছে না? এখনও জেলা কমিটি পূর্নাঙ্গরুপ নিচ্ছেনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আতিকুজ্জামান নোমান বলেন, এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। এগুলো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানেন, তারা বলতে পারবেন। তবে আমরা দুটি উপজেলা রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ায় সম্মেলন করেছি। সেখানে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। আর পূর্নাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। হয়তো খুব শীঘ্রই অনুমোদন দেওয়া হবে।

সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সোহেল বলেন, ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট জমা দিয়েছি। হয়ত অচিরেই আমরা অনুমোদন পাব। 

অপরদিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সহিদুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ব্যপারে সরাসরি কথা বলবো। এরপর গত তিনদিন ধরেও তার স্বাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে পূনরায় ফোন করা হলে জানান, আমি মহিউদ্দিনের ক্যাম্পিংয়ে ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দেন।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের বরিশাল বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রে পাঠানো পূর্নাঙ্গ কমিটির তালিকা আমরা যাচাই বাছাই করছি। খুবই শীঘ্রই কমিটি দিয়ে দেওয়া হবে।

আর উপজেলার বিষয়টি হলো আমরা ইতিমধ্যে দুটি উপজেলা কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে সম্মেলন করেছি। ওই দুইটার কমিটিও আমরা করে দিবো, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারনে ওইটা দেওয়া হয় নাই। খুব শীঘ্রই বাকি উপজেলা গুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা কমিটি গঠন করবো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭