ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাস্টারপ্ল্যানের পাঁচ অগ্রাধিকার


প্রকাশ: 29/02/2024


Thumbnail

আফরিন আক্তারের সফরের পর বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল, সেই টানাপোড়েন কাটিয়ে দুই দেশ অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চায়। এ ক্ষেত্রে দু দেশই সমান আগ্রহ ব্যক্ত করছে। 

বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি দীর্ঘমেয়াদী মাস্টার প্ল্যান রয়েছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করেন। বিশেষ করে পাকিস্তানে তাদের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) বিপর্যয়, মালদ্বীপে চীনের আধিপত্য সব সবকিছু মিলিয়ে উপমহাদেশ তাদের হাতছাড়া হতে চলেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে না চটিয়ে বরং বাংলাদেশের সাথে সহমর্মিতা এবং সৌহার্দের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মার্কিন মাস্টারপ্ল্যানের প্রধান অংশ। 

বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি অগ্রাধিকারের বিষয় রয়েছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। এই অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে;

১. চীনের আধিপত্য ঠেকানো: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে ঘিরে আগ্রহের প্রধান জায়গা হল চীনের আধিপত্যকে ঠেকানো। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ যেন চীনের ঋণের জালে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে নজর রাখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর সে কারণেই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ এডিবিকে বাংলাদেশমুখী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীন নির্ভরতা কাটানো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের প্রধান বিষয়। 

২. বঙ্গোপসাগর: বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর যেন কোন ভাবেই চীন বা অন্য কোন দেশের আওতায় না যায় বরং মার্কিন প্রভাব বলয়ে থাকে সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎপর। এমনকি এই ক্ষেত্রে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ পরিকল্পনা রয়েছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। গভীর সমুদ্র বন্দরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমতি পায় সেটিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের একটি অংশ। এখানে বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত। 

৩. বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা: বাংলাদেশে এখন বড় একটি বাজার তৈরি হয়েছে। দুই দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের গার্মেন্টস যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি হয়, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম খরচে বাংলাদেশের গার্মেন্টস এর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন কোন কোন মহল। আর এই কারণেই কূটনীতিক অঙ্গনে এখন একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের বোয়িং কেনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইটি সেক্টরে বাংলাদেশে যেন কাজ করতে পারে তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দুই দেশের আরও নতুন নতুন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অগ্রাধিকারের বিষয়। 

৪. সামরিক অংশিদারিত্ব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সামরিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে রেখেছে। বিশেষ করে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ভাববে বলে একাধিক সূত্র মনে করছে।

৫. জঙ্গিবাদ দমন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গিবাদ দমনে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনেও বাংলাদেশকে পাশে চায়। এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলকে ঘিরে যে মহাপরিকল্পনা করেছে সেই মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশিদারি। এ কারণেই নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র তার কূটনীতিতে ইউটার্ন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭