ইনসাইড পলিটিক্স

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মরিয়া বিএনপি


প্রকাশ: 29/02/2024


Thumbnail

বিএনপি তার কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ করার চেষ্টা করছে। একদিকে ভারত বিরোধিতা, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অভিমান, পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এই ত্রিমুখী কৌশল গ্রহণ করেছে নির্বাচনী কৌশলে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হওয়া বিএনপি। নির্বাচনের আগে বিএনপির কূটনৈতিক কৌশল ছিল পুরোপুরি ভাবে পশ্চিমা মুখী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। 

বিএনপির নেতারা মনে করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপির প্রতি সহানুভূতি দেখাবে। একতরফা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না। বাংলাদেশের ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। ফলে বিএনপির জন্য আওয়ামী লীগের পতন ঘটানো সহজতর হবে। সেই প্রত্যাশা থেকেই তারা অনড় অবস্থানে ছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। বিশেষ করে বিএনপির সন্ত্রাস, সহিংস তৎপরতাকে তারা প্রত্যাখ্যান করে এবং বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সবগুলো দেশই স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে সব দেশ। এরকম বাস্তবতায় বিএনপি মনে করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে এক রকমের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে ভারতের পক্ষ হয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার নীলনকশা বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছে। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনকার সম্পর্ক বিএনপির আগের মতো নেই। বরং একটা শীতল পরিস্থিতি বিরাজ করছে দুই পক্ষের সম্পর্কের মধ্যে। এরকম বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আগের মতো আর নির্ভরশীল থাকতে চায় না বিএনপি। 

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকাতেও বিএনপির নেতৃবৃন্দ হতাশ। আর এ কারণে বিএনপি তার পুরনো কূটনৈতিক কৌশলে ফিরে যাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির কূটনৈতিক অবস্থান ছিল ভারত বিরোধী, চীন মুখী। বিএনপিতে একটা সময় প্রচুর চৈনিক বামদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। বিশেষ করে তরিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, নজরুল ইসলাম খান, ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো চৈনিক বামরা বিএনপিকে প্রাচ্য কূটনৈতিক নীতিতে আগ্রহী করে তুলেছিল। চীন, জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা, ভারত বিরোধিতার রাজনীতিকে বাংলাদেশে জাগিয়ে তোলাই ছিল তাদের কৌশল। কিন্তু আস্তে আস্তে বিএনপি সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। ভারতের সঙ্গে এক ধরনের প্রকাশ্য হলেও সুসম্পর্ক রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন নির্বাচনের পর বিএনপি সরাসরি ভাবে ভারত বিরোধী অবস্থানে চলে গেছে।

বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন যে, বিএনপির এই অবস্থার জন্য ভারত দায়ী। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসেছে ভারতের কারণে। এ নিয়ে কোন রাখঢাক ছাড়া তারা সরাসরি কথা বলেন। আর এ কারণেই তারা এখন চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আগ্রহী। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির একাধিক নেতা চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিএনপির হাইকমান্ড থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, চীনের সঙ্গে যাদের পুরনো সম্পর্ক রয়েছে সেই সম্পর্কগুলোকে ঝালিয়ে নেওয়া। এ ছাড়াও বিএনপির সঙ্গে যারা যৌথ আন্দোলন করছে সে আন্দোলন অংশীদারদের মধ্যে যারা চীনপন্থী রয়েছেন তাদের মাধ্যমেও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করতে চায় বিএনপি। বিএনপি মনে করছে যে, সরকারের সঙ্গে চীনের একটা অনিবার্য দূরত্ব তৈরি হবে। কারণ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বাস্তব প্রেক্ষাপটেই চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবন্নতি ঘটবে। এই বাস্তবতায় তারা চীনকে পাশে পেতে চাইছে। 

বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে, পাকিস্তানে পিটিআই যেভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল বা  মালদ্বীপে যেভাবে চীন ভারতকে রূখে গিয়েছে ঠিক সেভাবে তারা বাংলাদেশে চীনা রাজনৈতিক ধারার এবং চীনের প্রিয় এবং বিশ্বস্ত রাজনৈতিক অংশীদার হতে পারে। আর এ লক্ষ্যেই এখন বিএনপি নীরবে কাজ করছে। বিএনপিতে থাকা চীনপন্থী নেতারা এখন সরব।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭