প্রকাশ: 02/03/2024
গেল কয়েক
বছরে ধরে যাত্রী চাহিদা বেড়েছে এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার
বিভিন্ন দেশে। এসব গন্তব্যে একের
পর এক নতুন ফ্লাইট
পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী
উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত দুই বছরে
শুরু হয়েছে কানাডার টরেন্টো, জাপানের নারিতা ও চীনের গুয়াংজুতে
ফ্লাইট পরিচালনা। আগামী মার্চে সরাসরি ফ্লাইট যাবে ইউরোপের দেশ
ইতালির রোমে।
চলতি
বছরের ডিসেম্বরে ফের ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটেও বিমান। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয়টি গন্তব্যে
ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় সংস্থাটি।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তর থেকে ‘ফরেন এয়ার ক্যারিয়ার
পারমিট’ পেতে আবেদনও করেছে।
১৬টি
বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজসহ মোট ২১টি এয়ারক্রাফট
আছে বিমানের বহরে। এছাড়া দুটি কার্গোসহ আরও
১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার
পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। এগুলো দিয়ে একেক করে
নতুন রুট চালু করতে
পারবে বলে মনে করে
সংস্থাটি।
বিমানের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল
আজিম বলেন, ‘যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় একের পর এক
নতুন গন্তব্যে ডানা মেলছে বিমান।
এখন ইতালির রোম রুটে টিকিট
বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকা
থেকে সরাসরি রোমে ফ্লাইট পরিচালনা
করা হবে। মাঝে কোনো
দেশে ট্রানজিটের প্রয়োজন হবে না। এভাবেই
ভবিষ্যতে নিউইয়র্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিমানের ফ্লাইট
পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।’
আগামী
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে চালু হচ্ছে ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটে
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট।
এর আগে ১৯৮১ সালের
২ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রোম ফ্লাইট চালু
হয় এবং ২০১৫ সালের
৬ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যায়।
১০ বছর পর আবার
এই রুটে যাত্রী পরিবহনে
সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিমান। বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে
রোমে ফ্লাইট পরিচালিত হবে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিমান
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল
আজিমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইতালির রাষ্ট্রদূত
আন্তোনিও আলেসান্দ্রো। এসময় শফিউল আজিম
ঢাকা-রোম উদ্বোধনী ফ্লাইটের
জন্য রাষ্ট্রদূতের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। ইতালীয় দূতাবাস বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে সব ধরনের সহযোগিতা
করবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
বিমানের
পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মোহাম্মদ
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘২৬ মার্চ ফ্লাইট
পরিচালনায় যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন উদ্বোধনী ফ্লাইটের
টিকিটে ১০ থেকে ১৫
শতাংশ ছাড় চলছে। টিকিট
বিক্রিতে যাত্রীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশাকরি
এ রুটে যাত্রীদের চাহিদা
অনুযায়ী সেবা দিতে পারবে
বিমান।
সম্পন্ন
হয়েছে ২৬ মার্চ ফ্লাইট পরিচালনায় যাবতীয় প্রস্তুতি । এখন উদ্বোধনী
ফ্লাইটের টিকিটে চলছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ
ছাড়। টিকিট বিক্রিতে যাত্রীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশাকরি
এ রুটে যাত্রীদের চাহিদা
অনুযায়ী সেবা দিতে পারবে
বিমান’।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপের মধ্যে ইতালিতে বাংলাদেশি প্রবাসী বেশি বাস করে। তাই প্রথমেই রোমে ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বিমান। এ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রোমের বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহন করবে।’
২০০৫-০৬ অর্থবছরে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ৭৯টি ফ্লাইট
পরিচালনা করেছিল বিমান। তখন যাত্রী সংকটে
লোকসানের কারণে এ পথে ফ্লাইট
বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে
ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছিল বেবিচক।
পরে চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ
থাকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ফ্লাইট। ১৮ বছর পর
ফের এই রুটে ফ্লাইট
পরিচালনা শুরু করতে চায়
বিমান।
নতুন
করে বিমানকে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে
ফ্লাইটের অনুমোদন পেতে হলে হযরত
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) থেকে ক্যাটাগরি-১
ছাড়পত্র পেতে হবে। এ
ছাড়পত্রের জন্য পূরণ করতে
হবে বেসামরিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিএওর সব মানদণ্ড। এখন
ক্যাটাগরি-২ এ অবস্থান
করছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচক
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরকে ক্যাটাগরি-১ এ আনার
জন্য সব ধরনের চেষ্টা
করছে বেবিচক। এই বিমানবন্দরের তৃতীয়
টার্মিনালে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে সব
মানদণ্ড পূরণ হবে। তখন
নিজস্ব দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ দিয়ে
ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে সপ্তাহে পাঁচটি
ফ্লাইট চালানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ
থেকে দীর্ঘতম আকাশপথ ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট।
এই রুটের দূরত্ব প্রায় ১২ হাজার ৬৭২
কিলোমিটার। বর্তমানে এই দূরত্বে বিমানের
কোনো ফ্লাইট নেই। তাই আবেদনে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের ইজমির
বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল নেওয়ার
জন্য যাত্রাবিরতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই
সময়ে কোনো যাত্রী উড়োজাহাজে
ওঠানামা করবে না। এক
ঘণ্টা বিরতি শেষে নিউইয়র্কের জন
এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করবে।
একই
আবেদনে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে
ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনে (ডিওটি) যে
আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে,
একই আবেদনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লসঅ্যাঞ্জেলেস,
ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, হোস্টন, ডালাস ও নিউ জার্সিতে
ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে।
এসব
রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় সম্ভাব্য যাত্রাবিরতির জন্য ১০টি বিমানবন্দরের
নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। সেগুলো
হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি,
ইতালির রোম, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস,
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও ইজমির, ভারতের
নিউ দিল্লি এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম।
এসব বিমানবন্দর থেকে বিমান জেট
ফুয়েল নেবে। সেখানে কোনো যাত্রী ওঠা-নামা করবে না।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর বেসামরিক
বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমানের
সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায়
নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ওই বৈঠকের
এজেন্ডা ছিল আকাশপথের নিরাপত্তা
ও ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট
চালু। বৈঠকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে
ফ্লাইট চালুর বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা চান বেবিচক চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে পিটার হাস সহযোগিতার আশ্বাস
দেন। পাশাপাশি আকাশপথের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা ও বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীতকরণের
উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-টরেন্টো-ঢাকা সরাসরি বাণিজ্যিক ফ্লাইট। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে জাপানের নারিতায় উড়াল দেয় বাংলাদেশ বিমান। এর দুই সপ্তাহ পর ১৪ সেপ্টেম্বর চীনের গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে সংস্থাটি। গত দুই বছরে নতুন রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ধারা অব্যাহত রেখে চলতি বছরও শিগগির ইতালির রোমে উড়াল দিতে প্রস্তুত রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটি।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭