ইনসাইড বাংলাদেশ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে সরকারের স্ববিরোধীতা?


প্রকাশ: 02/03/2024


Thumbnail

টানা চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের একমাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এই সময়ে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি যে চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করছে তা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ। 

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরাই তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে যে এগারোটি অঙ্গীকারের কথা বলেছে, সেই অঙ্গীকারের মধ্যে প্রথম আছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার বলেছেন যে, সরকারের জন্য প্রধান অগ্রাধিকার হলো দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা। কিন্তু দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য যে ধরণের উদ্যোগ এবং ব্যবস্থাপনা দরকার সেটি সরকার কতটুকু করছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলো মন্ত্রণালয় হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত পাঁচ বছর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন টিপু মুনশি। তিনি দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন একথা আওয়ামী লীগের নেতারাই প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থেকে একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করে তিনি বাজারব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলেছেন। তার সময়ে জিনিসপত্রের দাম সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দফায় দফায় বেড়েছে। একেক বার একেক পণ্যের দাম রেকর্ড স্পর্শ করেছে। আর এই সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠে ছিল যে, বাণিজ্যমন্ত্রীর পরিবর্তন। কিন্তু এই সমস্ত দাবি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর টিপু মুনশিকে দায়িত্বে বহাল রেখেছিল। টিপু মুনশির আমলে বাংলাদেশের পণ্যের বাজারে যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল নতুন প্রতিমন্ত্রী এসে সে অস্থিতিশীলতা দূর করতে পারেনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিল, যেহেতু সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে তাদের প্রধান অগ্রাধিকার বিবেচনা করে, দ্রব্যমূল্য মানুষের সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে চায় তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন দক্ষ, যোগ্য এবং সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু ১১ জানুয়ারির মন্ত্রিসভার মাধ্যমে নতুন সরকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাকে দায়িত্ব দিয়েছে তিনি অপেক্ষাকৃত তরুণ রাজনীতিবিদ এবং তিনিও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় পাননি। তাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অনেকে মনে করেছিল যে, সরকার বোধহয় যখন মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করবে, তখন একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেবেন। কারণ এই মন্ত্রণালয়টি স্পর্শকাতর। সরকারের জনপ্রিয়তা এবং জনআস্থা অনেকখানি নির্ভর করে এই মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা এবং সফলতার ওপর। কিন্তু মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে মাত্র সাত জন প্রতিমন্ত্রীকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কোন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রীই দায়িত্ব পালন করছেন এখন পর্যন্ত। প্রশ্ন হলো যে, অন্যান্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যখন একাধিক মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে যেমন; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিভাবে একজন প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে চালানো হচ্ছে? এটি কি সরকারের স্ববিরোধীতা নয়? সরকার যখন বলছে যে, তারা জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং বাজারকে সহনীয় অবস্থায় নিয়ে যেতে চায় তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী তাও অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রতিমন্ত্রী দেওয়াটা কতটুকু যৌক্তিক এবং এর ফলে বাজার কতটুকু স্থিতিশীল হবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতি এবং কৌশল এখন প্রশ্নের মুখোমুখি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭