ইনসাইড বাংলাদেশ

মন্ত্রিত্ব দায়িত্ব না পুরস্কার?


প্রকাশ: 02/03/2024


Thumbnail

সাধারণত উন্নত আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয় দক্ষতার ভিত্তিতে। একজন ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদ যে বিষয়ে দক্ষ যে বিষয়ে তিনি বিশেষভাবে পারদর্শি, তাকে সেই মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ঋষি সুনাক ছিলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতিতে তার আলাদা ধরনের দক্ষতা ছিল। আর এ কারণেই তাকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। 

ভারতের অর্থমন্ত্রী অর্থনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করছেন। তার বিশেষায়িত দক্ষতা রয়েছে। এভাবে সব দেশেই মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে তার দক্ষতা, যোগ্যতা দেখা হয় সবার আগে। কিছু কিছু ব্যতিক্রম যে নেই, তা না। অনেক সময় স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয় দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকে। ভারতের প্রয়াত রাজনীতিবিদ প্রণব মুখার্জি অর্থমন্ত্রী হিসেবে বিশ্বের অন্যতম সফল অর্থমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন তার রাজনৈতিক পাণ্ডিত্য এবং দূরদর্শিতার কারণে। একই ভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও তার সফলতা অপরিসীম। অর্থাৎ একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ অনেক ক্ষেত্রেই একজন সফল মন্ত্রী হন তার রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতা, অভিজ্ঞতার আলোকে। তাছাড়া সিনিয়র রাজনীতিবিদরা মন্ত্রী হলে আমলাতন্ত্র আঁটোসাঁটো থাকে, তাদের কথা শুনে। আর এই দুটি বিবেচনা থেকেই সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মন্ত্রিসভার বিন্যাস তৈরি করা হয়। 

ব্যতিক্রম অবশ্য বাংলাদেশে। বাংলাদেশে মন্ত্রিসভার নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা কতটুকু বিচার করা হয় সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। মন্ত্রিসভা বণ্টনের ক্ষেত্রে এখন যেমন জেলা কোটা দেখা যাচ্ছে, তেমনই দেখা যাচ্ছে যে, না পাওয়া ব্যক্তিদেরকে দিয়ে মন্ত্রিসভা পূরণ করা। অর্থাৎ দীর্ঘ জীবন রাজনীতি করেছেন, কোন কিছু পাননি তাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হলো। মন্ত্রিত্ব এখন একটি পুরস্কার। সেই কাজের জন্য তিনি কতটুকু যোগ্য বা সেই কাজের জন্য প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তার কতটুকু আছে সেসব বিষয়ে বিবেচনা করা হয় না। এবার মন্ত্রিসভায় ৪৪ জন সদস্য হয়েছে গত শুক্রবার সাত জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের মধ্য দিয়ে। এই ৪৪ সদস্যের মন্ত্রিসভায় কয়েকজন স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। তিনি একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। কাজেই তার এ বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষতা বা যোগ্যতা থাকতে পারে। অন্যান্য মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে কার কতটুকু বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সে নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পরিকল্পনামন্ত্রীর কথাই ধরা যাক। তিনি পরিকল্পনা বিষয়ে কতটুকু বিশেষজ্ঞ বা এ নিয়ে তিনি অতীতে কি কাজ করছেন, তা নিয়ে আমরা একরকম অন্ধকারে আছি। বরং দীর্ঘদিন রাজনীতি করা বয়োপ্রবীণ হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। 

নতুন করে সাত জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এই পুরস্কার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারা অবহেলিত অঞ্চলগুলোতে আছেন, মাঠের রাজনীতি করেন, স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তাদেরকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে এক ধরনের সম্মানিত করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল মন্ত্রীদেরকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করে সরকার কি ঝুঁকি নিচ্ছে না?

গত মেয়াদে যারা মন্ত্রী ছিলেন তাদের অনেকেই এরকম সম্মানিত হয়ে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এর ফলে ক্ষতি হয়েছে আওয়ামী লীগের, সরকারের। এবারও মন্ত্রিসভায় যোগ্যতা বা ঐ বিষয়ে তার পারদর্শিতা বা রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতা বিচার করা হচ্ছে কম বরং দেখা হচ্ছে তিনি কোন এলাকার এবং কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ ধরনের পুরস্কারের ফলে অনেকে মন্ত্রিত্বকে অবকাশ যাপন এবং একটি প্রাপ্তি যোগ হিসেবে মনে করছেন। তারা এটিকে দায়িত্ব হিসেবে মনে করছেন না। আর এই দায়িত্বরোধ না থাকলে মন্ত্রীরা দক্ষতার সঙ্গে মন্ত্রণালয় চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭