ইনসাইড বাংলাদেশ

আবার ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে‌ন আমলারা


প্রকাশ: 02/03/2024


Thumbnail

২০১৮-২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদে আমলাদের ক্ষমতা ছিল অসীম। আমলারাই হয়ে উঠেছিলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান। বিশেষ করে করোনার পর থেকে আমলাদের দাপট বেড়েছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিসি থেকে সচিব পর্যন্ত কেউই আমলাদের পাত্তা দিচ্ছেন না। শাসন ব্যবস্থার চাবি আমলারা হাতে তুলে নিয়েছিল। জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসকদের। সেখানে তারা প্রায়ই সংসদ সদস্যদের পাত্তা দিতেন না। কোনো কোনো সংসদ সদস্য এমনও অভিযোগ করেছেন যে, জেলা প্রশাসকরা তাদের ফোন পর্যন্ত ধরেন না৷ 

উপজেলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কোনো ধরনের কথাই শুনতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আমলাতন্ত্রের বারবারন্ত নিয়ে জাতীয় সংসদেও একাধিকবার কথা হয়েছিল।

করোনার সময় সরকার কৌশলগত কারণে সচিবদেরকে জেলার দায়িত্ব দেন। ৬৪ জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদেরকে। যার ফলে রাজনীতিবিদরা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, সচিব এই চেইনে সরকার পরিচালিত হতে থাকে। সেখানে রাজনীতিবিদ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মন্ত্রীরাও হয়ে পড়েন  আলংকারিক। 

একজন প্রতিমন্ত্রী একনেকের বৈঠকে অভিযোগ করেছিলেন যে, সচিব তাকে ফাইলও দেন না। এরকম একটি বাস্তবতার কারণ ছিল যে, রাজনীতিতে সক্রিয় নেতৃবৃন্দ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। মন্ত্রিসভায় যারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তারা অনেকেই ছোট পর্যায়ের নেতা, স্থানীয় পর্যায়ের নেতা৷ কাজেই তাদের ওপর আমলাদের খবরদারি ছিল খুবই সহজসাধ্য বিষয়। কিন্তু ২০২৪ এর নির্বাচনের পর টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ এবং এই সরকার গঠনের পর রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য দেখা যায়।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। ফলে অনেকেই ধারণা করেছিল যে আমলাতন্ত্রের হয়তো ক্ষমতা সঙ্কুচিত হবে। বিশেষ করে কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক মন্ত্রী জায়গা পেয়েছেন, তারা মন্ত্রণালয়ের কাজ সম্পর্কে ভালো মতো ওয়াকিবহাল হয়েছেন। এরকম বিবেচনা থেকে অনেকে মনে করেছিল যে, আমলা নির্ভরশীলতা কমবে, কিন্তু সময় যত যাচ্ছে ততই আমলারা আস্তে আস্তে ক্ষমতার কেন্দ্রে জাকিয়ে বসছেন এবং আমলাদের ক্ষমতাকেন্দ্রে বারবারন্ত এত বেশি হচ্ছে যে, তারা আবার মন্ত্রীদের এবং রাজনীতিবিদদের ওপর এক ধরনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে।

আমলাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গত দেড় মাসের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আমলারা মন্ত্রণালয় গুলোর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া আমলারা মন্ত্রীদের ওপর খবরদারি করতে পারছেন সহজেই। এছাড়াও মন্ত্রিসভা যখন বর্ধিত করা হলো রাজনীতিবিদদের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রভাব আরও সঙ্কুচিত হয়েছে। নতুন মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ে কাজ বুঝতে সময় নিবেন, এরকম বিবেচনায় আমলারা আরও ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে। 

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আস্তে আস্তে মন্ত্রণালয়ে কর্তৃত্বের লড়াই দৃশ্যমান হচ্ছে এবং সেখানে নতুন মন্ত্রীদেরকে শুরুতেই আমলারা কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় কেউ কেউ সফলও হচ্ছেন। সে জন্য অনেকেই মনে করছেন যে, আমলারা আবারও ক্ষমতাবান হয়ে উঠছেন। সরকার পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই চলে যাচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭