ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের বিভক্তি এবং একলা চলো নীতি


প্রকাশ: 02/03/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগ তার রাজনীতির ইতিহাসে সব চেয়ে সময় কাটাচ্ছে। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় চতুর্থ মেয়াদে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে দলটি। কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাদের সামনে নেই বললেই চলে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং রুটিন কিছু চ্যালেঞ্জ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো এই মুহূর্তে কোন শক্তি নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য এরকম পরিস্থিতিও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে অতি আত্মবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। নেতাকর্মীরা এখন মনে করছেন যে, তাদের জন্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী। 

অনেকেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি করছেন। সাধারণ মানুষকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। আওয়ামী লীগকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না এরকম একটি চিন্তাভাবনা থেকে অনেকে তাদের দুঃসময়ের বন্ধু বা সাথীদেরকেও অবজ্ঞা অবহেলা করছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যেন কিছুতেই থামছে না। অনেকেই মনে করছেন যে, সারা দেশে আওয়ামী লীগ দুই তিনভাগে বিভক্ত এবং এই বিভক্তি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সামনের দিনগুলোতে সাংগঠনিক ভাবে দলটি দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে আওয়ামী লীগের জন্য সেটি কোন বড় সমস্যা না। 

সংগঠন শক্তিশালী রাখতে হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করার জন্য। যারা বিরোধী দল তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একটি দলের সংগঠন শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন। আওয়ামী লীগের সামনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল নেই, যারা আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। যার ফলে আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকটাই আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন, তারা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে পাত্তা দিচ্ছেন না। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলেও তারা মনে করছেন। 

পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সব ক্ষেত্রেই একাকী এবং বন্ধুহীন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের যে আদর্শিক জোট ছিল ১৪ দল তা এখন থেকেও নেই। এটি রীতিমতো মৃতপ্রায়। আওয়ামী লীগ সুশীল বা বুদ্ধিজীবী সমাজের মধ্যে আগে যে একটা সম্পর্ক তৈরি করেছিল সেই সম্পর্কটাও আর অব্যাহত রাখছে না। বরং সুশীলদের সাথে আওয়ামী লীগের একটা সুস্পষ্ট দূরত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যে মিত্র এবং শুভাকাঙ্ক্ষী আছে তাদেরকেও আওয়ামী লীগ খুব একটা আমলে নিচ্ছে বলে মনে করা হয় না। 

ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিদের একটা সুসম্পর্ক থাকে। সেক্ষেত্রেও কিছু চাটুকার ছাড়া আওয়ামী লীগ কারও সাথে সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহ না। আওয়ামী লীগ এখন এমন অবস্থায় গেছে যে, যেখানে তারা মনে করছে কাউকেই তাদের প্রয়োজন নেই। একদিকে দলের বিভক্তি অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একাকী চলো নীতি এর পরিণতি কি—এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ চিন্তাভাবনা করছেন। কারণ এখন বিরোধী দল নেই জন্য সামনের দিনগুলোতে বিরোধী দল থাকবে না—এমন ভাবার যেমন কোন কারণ নেই তেমনি এখন যদি আওয়ামী লীগ বন্ধুহীন হয়ে পড়ে তাহলে ভবিষ্যতে বন্ধু খুঁজে পাওয়া তার জন্য দুষ্কর হতে পারে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা মনে করেন সুসময় থেকে দু:সময়ের দূরত্ব কম না। আজকে আওয়ামী লীগের ভালো সময় যাচ্ছে কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি বিভক্ত এবং কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সংকটে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আবার একই কারণে বিপদে কোন সাথীও পাবে না। আওয়ামী লীগ যেন হিমালয়ের চূড়ায় উঠেছে একাকী। কিন্তু নামার সময় তার সঙ্গী দরকার। সেই সঙ্গী পাবে কি?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭