ইনসাইড পলিটিক্স

প্রথমবার এমপি হয়েই মন্ত্রী: রহস্য কি?


প্রকাশ: 02/03/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কিছু ভাগ্যবান ব্যক্তি আছেন, যারা রাজনীতিতে এসেই সবকিছু পেয়ে যান। অর্ধেক রাজত্ব এবং রাজকন্যার মতো তারা এলাম, দেখলাম, জয় করলাম এর মতো সবকিছু পেয়ে যান। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই পাওয়াটা তারা ধরে রাখতে পারেন কিনা সেটাই হল রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষা অনেকে অনুত্তীর্ণ হন। 

১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রথমবারের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী হয়েছিলেন উপমন্ত্রী। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি রাজনীতির নানা গোলক ধাঁধার আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। এবার অবশ্য তিনি আবার পূর্ণমন্ত্রী হয়ে ফিরে এসেছেন। 

২০১৮ সালেও অ্যাডভোকেট শ. ম রেজাউল করিম প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েই পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। এটি ছিল একটি অনন্য রেকর্ড এবং এইবার তিনি অবশ্য আর মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। 

এবার সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় দুইজন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন যারা এবারই প্রথমবারের মতো এমপি হলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ডা. রোকেয়া সুলতানা। তিনি এবার প্রথমবারের মতো সংরক্ষিত আসনে এমপি নির্বাচিত হলেন এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। অন্যদিকে শামসুন নাহার চাঁপা এবারই প্রথমবারের মতো এমপি হয়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলে এটি একটি বড় উত্থান, বড় প্রাপ্তি। অনেকেই আছেন যারা ৭/৮ বার এমপি হয়েও একবার প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেননি। কিন্তু সেক্ষেত্রে রোকেয়া এবং শামসুন নাহার এক বিরল ব্যতিক্রম। এবার কোন বিবেচনায় তাদেরকে একসাথে এমপি এবং মন্ত্রিত্ব দেওয়া হল—এই প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, এই দুই জনেরই অবদান অনেক বেশি। আওয়ামী লীগ চারবার সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করলেও চারবারের মধ্যে এবারই তারা প্রথম এমপি হিসেবে জায়গা পেয়েছেন। অথচ বিভিন্ন সময়ে তাদের ত্যাগ তিতিক্ষার রয়েছে। 

রোকেয়া সুলতানা একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তিনি সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অটুট থেকেছেন এবং বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামে তাকে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত জীবনে একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত। গত কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছিল যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আস্তে আস্তে পাদপ্রদীপে আনছেন। তিনি আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হয়েছিলেন। এটি ছিল তার জন্য একটা বিরাট প্রাপ্তি। এবার তাকে সংসদ সদস্য যখন করা হয় তখনই বোঝা যাচ্ছিল যে, তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জায়গা পেতে যাচ্ছেন। 

অন্যদিকে শামসুন নাহার চাঁপা একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ। ড. রাজ্জাকের ছোট বোন হলেও তাদের দুজনের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। কিন্তু ড. আবদুর রাজ্জাকের ছায়ার নিচে না থেকে তিনি নিজের রাজনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই দুজনের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্যেআছে। তারা দুজন খুব সাধারণ সাদাসিধা জীবনযাপন করেন। যখন তারা সম্পাদকমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন তখনও তাদের মধ্যে কোন রকম ক্ষমতার দাপট বা অহংকার দেখা যায়নি। তাদের মধ্যে দেখা গেছে এক ধরনের নম্রতা এবং শিষ্টাচার। সব সময় তারা মাটিতে পা রেখেছেন। আর এ কারণেই তাদের প্রতি শেখ হাসিনা একটি বিশেষ উপহার দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অতীতের মতো তারাও মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর রাজনীতিতে বিকশিত হতে পারেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়। সবকিছু পেয়ে যাওয়ার পর যদি তারা ঠিক থাকতে পারেন, যদি তারা আগের মতোই সৌহাদ্যপূর্ণ এবং নমনীয় অবস্থায় থাকতে পারেন তাহলেই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭