ইনসাইড থট

সামন্ত লাল-রোকেয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে সক্ষম


প্রকাশ: 04/03/2024


Thumbnail

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সত্যিকারের নতুন যাত্রা শুরু হল। প্রথমে ডা. সামন্ত লাল সেন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেছিলেন পরবর্তীতে ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করলেন। এই দুজনের অতীত ব্যক্তিগত ভাবে আমার জানা। তারা অন্তত সৎ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তারা ঢেলে সাজাতে সক্ষম। তবে ডা. সামন্ত লাল সেনের তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি তার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালো করে নিজস্ব ধারণা থাকা সম্ভব নয়। তিনি ১০ বেড থেকে ৫০০ বেডের বিরাট শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট করেছেন। এটা একটা বিরাট সাফল্য। বার্ন চিকিৎসা বাংলাদেশে উপেক্ষিত ছিল। বলা যায় ডা. সামন্ত লাল সেন এই চিকিৎসার জনক। এটা বাংলাদেশের চিকিৎসার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসের একটি অংশ। এটা অস্বীকার করা যাবে না। তার সততা এবং তার কর্ম ক্ষমতা দেখেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো বুঝা শুরু করেছেন।

স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা পুরো বিষয়টি চিন্তা করলে দেখা যায় এটা একটা বিরাট মন্ত্রণালয়। এর অনেক দিক আছে। একদিকে চিকিৎসা, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক আবার অন্যদিকে মেডিকেল কলেজ। আবার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই দেখতে হয়। আর এদিক থেকে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনেক ভালো সহযোগিতা করতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

অনেক আগে থেকেই আমি প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা চিনি। খুব অল্প বয়সে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার পিতাকে তার সামনে হত্যা করে। তারপর থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করছেন। তিনি তার স্কুল জীবন থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ জীবন, পরবর্তীতে ডাক্তার হওয়ার পরে চাকরি করার সময় পর্যন্ত প্রতি স্তরে বাংলাদেশের এমন কোন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে তিনি যাননি। আমার এখনো মনে আছে যখন ঢাকায় সেই সময় আন্দোলন চলছিল সে সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমাদের রাত ৩ টা থেকে ৪ টা বেজে যেত মিটিং শেষ হতে। যেহেতু সে আমাদের ছোট ছিল তাই অনেক সময় আমি তাকে বলতাম তুমি চলে যাও। একদিন সে আমাকে বলেছিল সবাই চলে গেছে ঠিক আছে কিন্তু আপনি আমার বড় ভাই আপনাকে একা রেখে আমি কিভাবে চলে যাই। এর মধ্য দিয়ে সে বুঝাতে চেয়েছে যে, বিরোধী পক্ষ তারা তো সবাই আছে। তাহলে আমি কেন চলে যাব। এভাবে ডা. রোকেয়া প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান রেখেছেন। দায়িত্ব না দিলেও সে নিজ দায়িত্বরোধ থেকে কাজ করেছেন। এর বিপরীতে আজ পর্যন্ত তার মধ্যে কোন চাওয়া পাওয়া আমি দেখিনি। সে এখন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। ডা. সামন্ত লাল সেন এবং ডা. রোকেয়া দুজনই স্বাস্থ্য খাতের মানুষ এবং তারা উভয় খুব সৎ। 

আমরা জানি যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি সম্পর্কে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। যখন কোন দুর্নীতির খবর আমরা জানতে পারি তখন এর ডালাপালার কথা শোনা যায়। এটার যে পাবলিক পারসেপশন সেটা কিন্তু এখন রাতারাতি পরিবর্তন হওয়া শুরু করেছে। তারা বুঝেছে এখন আর দুর্নীতি হবে না। দুর্নীতি হবে না এটাই শেষ কাজ নয়। আরও অনেক কাজ করতে হবে। 

ইতোমধ্যে মন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসকদের রক্ষা করা যেমন আমার দায়িত্ব একই ভাবে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদেরও রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। এ থেকে এটা পরিষ্কার যে দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন। এতে কোন ধরনের তার গ্যাপ নাই। সেই ভাবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে সমস্যা হল আমাদের আমলাতন্ত্র। এই আমলাতন্ত্র অনেক কঠিন বিষয়। এটা আমি সরাসরি দেখেছি এবং আমার এ সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী দুজনই আমার খুব কাছে মানুষ, বেশ ভালো পরিচিয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবকে আমার কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপারে ফোন করতে বলেছিলাম তার নাম হল নাজমুল হুদা সিদ্দিকী। তিনি অতিরিক্ত সচিব বাস্তবায়ন শাখা। তাকে আমি বলতেও পারলাম না যে, আমি কমিউনিটি ক্লিনিকের। সে বলল আমি আপনাকে পরে ফোন করব। কিন্তু সে ফোন করেনি। আমার কমিউনিটি ক্লিনিকের সবাইকে ঢালাও ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি অর্থ দানের কথা বলেছেন। সবাইকে সেটি দেওয়া হয়েছে। একমাত্র কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার তারা কেউ এটা পায়নি। এই ফাইলটি অতিরিক্ত নাজমুল হুদা সিদ্দিকী আটকে রেখেছেন। আমি শুধু তাকে অনুরোধ করতে চেয়েছিলাম আপনি ফাইলটি রেখে দেন আমি মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী দুজনের সঙ্গে কথা বলব তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব আমার কোন কথাই শুনতে চাননি। এই হল একজন অরিরিক্ত সচিব এবং আমাদের আমলাতন্ত্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রী কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে অভিযানে গিয়ে দেখলেন মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ মেঝেতে পড়ে আছে। এটা কি কেউ একা করেছে? একটা বিরাট বড় চক্র সেটি করে থাকে। এই আমলাতন্ত্রের চক্র কি না করতে পারে। যারা রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে আসেননি তাদের জন্য এরকম আমলাদের নিয়ে কাজ করা অনেক কঠিন কাজ। আর সামন্ত লাল তো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেননি। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে তাকে আরও ভুল বুঝানোর চেষ্টা হবে। তবে ডা.রোকেয়া সুলতানা যেহেতু আছে আমার মনে হয় দুজনে মিলে তারা সমস্ত স্বাস্থ্য বিভাগকে এবার সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারবেন।

আমলাতন্ত্রের শিকার আমার কমিউনিটি ক্লিনিকও। এখনো কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের আওতায় আসল না। কারণ এই আমলারা আসতে দেয় না। ট্রাস্টের আওতায় আসলে তাদের মাতব্বরি থাকে না। স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর সে মাত্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে। মাত্র কয়েক মাস হচ্ছে দায়িত্ব গ্রহণের। এখনো হয়তো সবকিছু বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু তারপরও এখন পর্যন্ত আমি যতটুকু দেখেছি সে খুব ভালো কাজ করতেছে। আমার মনে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এতোদিনের যে সমস্ত বদনাম রয়েছে এবার সবকিছু তারা দূর করতে পারবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি সম্পর্কে মানুষের যে পারসেপশন পাল্টে যেতে শুরু করেছে এটাই আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।

একজন সিনিয়র চিকিৎসক হিসেবে আমি বলব যারা চিকিৎসক আছেন তাদেরও অনেক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের বিএমডিসি সঠিকভাবে কাজ করেনা। আমি দায়িত্ব নিয়ে এটা বলছি। তারা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে আমাদের পারসেপশন এতো খারাপ হতো না। পরিশেষে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল আরও বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতার মন্ত্রিত্বে আসা দরকার। যাদের ওপর জনগণের বিশ্বাস আছে, দলের বিশ্বাস আছে। যেমন, বাহাউদ্দিন নাছিম মির্জা আজম, এস এম কামালের মতো নেতারা কেন এখনো মন্ত্রিসভার বাইরে আছেন। এদের সাথে জনগণের একটা আত্মিক সম্পর্ক আছে। তাদের প্রতি দায়বদ্ধতাও আছে। আমলাতন্ত্রকে রেল লাইনে তোলার জন্য এদের মতো নেতাদের মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার দরকার। ফলে আমলাতন্ত্রকে সরল রেখায় রেখে মন্ত্রীরা দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য আরও ভালো কাজ করতেন পারবেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭