ইনসাইড পলিটিক্স

ভিআইপিরা চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান কেন?


প্রকাশ: 04/03/2024


Thumbnail

মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই মুহূর্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যুক্তরাজ্যে যাবেন এবং সেখানে তিনি চিকিৎসা করাবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। সিঙ্গাপুরে গেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

কদিন আগে চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছেন বিএনপির আরেক নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিদেশ থেকে চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন বিএনপির আরেক নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশে সাধারণত চিকিৎসা নেন না। চিকিৎসার জন্য তারা বিদেশে যান। বাংলাদেশের চিকিৎসায় তাদের আস্থা নেই? অবশ্য আস্থা থাকবে কি করে? যেখানে সুন্নতে খাৎনা করতেই শিশুর মৃত্যু হয়, সেখানে বড় বড় ভিআইপিরা তাদের জীবনের ঝুঁকি কিভাবে নেবেব। 

বাংলাদেশে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধের অভিযান পরিচালনা করছেন। কিন্তু এই অভিযান শেষ পর্যন্ত কতদূর যাবে বা এই অভিযানের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ রয়েছে।

এর আগে এরকম অভিযান শুরু করেছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য সচিব মো: আবদুল মান্নান। কিন্তু সেই সময় মন্ত্রীর প্রবল আপত্তির মুখে সেই অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। এখন অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী দুজনই সৎ, তাদের কর্মজীবনে দুর্নীতির কোন কালিমা নেই। তারা আন্তরিক ভাবেই দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্য খাতকে। স্বাস্থ্যসচিবেরও সততার রেকর্ড রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে শুদ্ধি অভিযান তার দিকে তাকিয়ে আছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর যদি আস্থা ফেরাতে হয় তাহলে ভিআইপি বা যারা রাজনৈতিক নেতা তাদের বাংলাদেশেই চিকিৎসা গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এবং এই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসার ব্যাপারে কতটুকু আস্থাশীল হবে সে প্রশ্ন থেকেই যাবে৷

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একমাত্র দেশে চিকিৎসা নেন। তিনি ১০ টাকায় টিকিট কেটে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চক্ষু পরীক্ষা করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি যান আশুলিয়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা বিশেষায়িত হাসপাতালে। খুব জটিল পরিস্থিতি না হলে বা দেশের চিকিৎসকরা অপারগতা প্রকাশ না করলে শেখ হাসিনা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান না। কিন্তু শেখ হাসিনার এই নীতি বা শেখ হাসিনার এই সংস্কৃতিকে কোনভাবেই অনুসরণ করেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। হাঁচি কাশি হলেও আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশে যান।

শুধু আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে দোষ দিয়ে লাভ কি। বিএনপির নেতারা এ ক্ষেত্রে তো আরও একধাপ ওপরে। বিএনপির কোনো নেতার সর্দি জ্বর হলেও তারা বিদেশে যান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে কোনো চিকিৎসা করেন না। দেশে চিকিৎসার ওপর তার আস্থা নেই বলে ধারণা করা হয়। বিএনপি দলগতভাবে দেশে চিকিৎসায় বিশ্বাস করে না। বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া তাদের প্রধান দাবি। এই দাবিতে তারা হরতাল পর্যন্ত করেছে। বিএনপির যে বড় বড় নামকরা চিকিৎসকরা রয়েছেন, যারা চেম্বার খুলে রীতিমতো রোগীদের গলা কাটেন, তারাও বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে চান। এটি কি তাদের অযোগ্যতা প্রমাণ করে না? বিএনপিপন্থি যে সমস্ত চিকিৎসকরা এর আগে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করছেন তাহলে কি তারা অদক্ষ অযোগ্য ছিলেন? 

বাংলাদেশে শুধুমাত্র বাংলাদেশের শুধুমাত্র রাজনীতিবিদরা না, বড় বড় ব্যবসায়ী, উচ্চবিত্তরা ও দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর কোন আস্থা রাখেন না। তারা যে কোন অসুখ বিসুখের জন্য বিদেশে যান। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ বিত্তরা জটিল কঠিন অসুখের জন্য ভারতে যান। আর একটু ধর্নাঢ্য হলে তারা যান সিঙ্গাপুরে বা ব্যাংককে। এখন দুবাই বা সংযুক্ত আমিরাতেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ঠিকানা হয়েছে।

একটু বেশি বড়লোকরা চিকিৎসার জন্য যান লন্ডন বা অ্যামেরিকায়। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যদি দেশের চিকিৎসায় আস্থাশীল না হন তাহলে সাধারণ মানুষ কতটুকু নিশ্চিন্তে চিকিৎসা নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে যে অঘটনগুলো ঘটছে সেই অঘটনের পর গরীব মানুষও স্বাস্থ্যের জন্য বিদেশমুখি হবেনা তা কে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে। এ কারণে এখন স্বাস্থ্য খাতে সবার আগে আস্থা ফেরানোটা জরুরী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭