ইনসাইড বাংলাদেশ

সাবেক মন্ত্রীর লন্ডন বিলাস: চার প্রশ্নের উত্তর নেই


প্রকাশ: 04/03/2024


Thumbnail

সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন যে, বিদেশে তার সম্পদ আছে কিন্তু এই সম্পদ কোনটা অবৈধ না। দুর্নীতি করে তিনি কোনো সম্পদের মালিক হননি। তিনি বলেছেন, তার বাবা ষাটের দশকের শেষ দিকে লন্ডনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি লন্ডনে ব্যবসা করছেন। করোনা কাল তার জন্য নাকি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল এবং সেই সুযোগে তিনি সেখানে তার ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী এটিও বলেছেন যে, তিনি তার মন্ত্রণালয়ে কোন দুর্নীতি করেননি। কেউ যদি তার দুর্নীতির প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তিনি আরও বলেছেন যে, ব্লুমবার্গ এর যে প্রতিবেদনে সেই প্রতিবেদনটি পড়লেই বোঝা যায় যে, তিনি যে সম্পত্তি বানিয়েছেন, সবই মর্টগেজ বা ঋণ নিয়ে করছেন। এটা স্বাভাবিক ব্যবসা। শুধুমাত্র লন্ডনে না, অন্যান্য দেশেও তার ব্যবসা আছে বলে তিনি দাবি করেছেন।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর এই সমস্ত বক্তব্য যদি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে, একটি বক্তব্য ছাড়া আর সব বক্তব্য অস্পষ্ট ধোঁয়াশে। যে বক্তব্যটি সত্য তা হল, তিনি বিগত পাঁচ বছর যে ভূমি মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন, তা নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়েছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ে তার কোন বদনাম নেই। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে তিনি কোন দুর্নীতি করেছেন বলে কেউ কোনদিন অভিযোগ করেনি। বরং তার পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বে ভূমি মন্ত্রণালয়কে তিনি একটি শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছেন, আধুনিক মানের করছেন এবং এ জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু লন্ডনে দুই হাজার সাতশ কোটি টাকার সম্পদ এবং বিদেশে তার ব্যবসা সংক্রান্ত অনেকগুলো প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। সেখানে যারা গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন তারা বুঝে, না বুঝে এই সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন কিনা সেটিও দেখার বিষয়। 

যে চারটি প্রশ্নের উত্তর নেই সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলনে সেগুলো হল;

১. তিনি যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখন কি লন্ডনে ব্যবসা করছেন। একজন মন্ত্রী যখন শপথ নেন তখন তাকে সমস্ত ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। যদি তিনি কোন কোম্পানির মালিক থাকেন। চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকেন, সেখান থেকে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। দেশে বিদেশে সব ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা প্রযোজ্য। তাহলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে যে ব্যবসা করেন মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি কি এই ব্যবসা পরিচালনা করেছেন? তার বক্তব্য অনুযায়ী তিনি করেছেন। কারণ তিনি বলেছেন, করোনা তাকে সুযোগ দিয়েছে এবং এই সময়ে তিনি ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন। তাই যদি সত্যি হবে তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। কারণ একজন মন্ত্রী মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দেশে বিদেশে কোথাও ব্যবসা করতে পারে না।

২. সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ১৯৯১ সাল থেকে তিনি লন্ডনে ব্যবসা করেন এবং তিনি আগে ব্যবসায়ী, পরে মন্ত্রী। ১৯৯১ সাল থেকে যদি তিনি বিদেশে ব্যবসা করেন তাহলে সেটি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করতে হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। কাজেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশি যদি ১৯৯১ সাল থেকে ব্যবসা করেন সেই ব্যবসার কোন তথ্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে, বাংলাদেশ সরকারকে বা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন কি না সেই প্রশ্ন তিনি উহ্য রেখেছেন। এটা যদি না করে থাকেন, তাহলে তিনি আইনত হবে অন্যায় করেছেন। কারণ একজন বাংলাদেশের নাগরিক বিদেশে যে জায়গাতেই ব্যবসা করুক না কেন তিনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন তাহলে তাকে সেই তথ্য বাংলাদেশের আয়কর বিভাগকে অবহিত করতে হবে। তিনি সেক্ষেত্রে আয়কর রেয়াত পাবেন বা পাবেন না সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু তথ্য অভিহিত করা তার জন্য বাধ্যতামূলক। 

৩. সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন যে, তার সম্পদের বিবরণী তিনি তার নির্বাচনী হলফনামায় প্রকাশ করেননি। এটা প্রকাশ না করার পিছনে তিনি যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা হল হলফনামায় বিদেশে সম্পদের কোন ঘর ছিলনা। এটি অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য। কারণ একজন ব্যক্তির সম্পদ সেটা দেশে হোক বিদেশে হোক তা হলফনামায় প্রকাশ করা। বিষয়টি হল যে, যিনি সংসদ সদস্য হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন তিনি সম্পত্তির মালিক কতটুকু। এটি দেশেও হতে পারে, বিদেশিও হতে পারে। কাজেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী যদি বিদেশে কোন সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনি এই সম্পত্তিগুলোকে তিনি হলফনামায় দিবেন এবং হলফনামায় না দেওয়াটা অপরাধ। এই বিষয়টি নিশ্চিয় নির্বাচন কমিশন ভালো মতই জানে এবং নির্বাচন কমিশন বিষয়টি দেখবে।

৪. সর্বশেষ যে বিষয়টি তা হল সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে ব্যবসা করছেন কি হিসেবে? তিনি কি দ্বৈত নাগরিক? তিনি তি ব্রিটেনের পাসপোর্ট ধারী নাকি তিনি বাংলাদেশি হিসেবে ব্যবসা করছেন। যদি তিনি বিদেশি পাসপোর্ট হন তাহলে তিনি বাংলাদেশে সংসদ সদস্য হবার অযোগ্য। আবার যদি তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে ব্যবসা করেন তাহলে তিনি টাকা যেখান থেকেই নিক না কেন তার সমস্ত তথ্য ‍উপাত্ত বাংলাদেশ সরকারকে দিতে বাধ্য। এ সমস্ত ধ্রুমজাল এবং এই সমস্ত উত্তরহীন প্রশ্নের জবাব সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে দিতে হবে। না হলে তার দুই হাজার সাতশ কোটি টাকার দায় দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭