ইনসাইড বাংলাদেশ

দুর্নীতির ইস্যুকে রাজনীতিকরণ করছেন ড. ইউনূস


প্রকাশ: 04/03/2024


Thumbnail

সরকারের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক ঐক্য এবং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য এখন প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিজেকে মামলার হাত থেকে বাঁচাতে এবং দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে তিনি যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন তার মধ্যে একটি হল বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করার আহ্বান জানাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

সাম্প্রতিক সময়ে ড. ইউনূসকে অত্যন্ত সরব দেখা যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশে মানবজমিন পত্রিকায় একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। এর আগে তিনি ডয়চে ভেলে-তে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এই সমস্ত প্রত্যেকটি সাক্ষাতকারে তিনি গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। 

গতকাল ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং মামলার জামিন আবেদনের শুনানি হয়েছে এবং ঢাকার একটি আদালতে তিনি হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন এবং তাকে আদালত জামিন দেন। এই জামিন পাওয়ার পর তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে। এই ঘটনা শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ খেয়াল করছে। এই বিচার কি হয়? আমরা যা দেখছি তা সবিস্তারে দেখছেন। 

উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূসই প্রথম নোবেলজয়ী নন, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। এর আগে বহু নোবেলজয়ী দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং নানা রকম অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে কারাভোগ করেছেন। একজন নোবেলজয়ী হলেই তিনি বিচারের ঊর্ধ্বে উঠে যান না। ড. ইউনূসও বিচারের ঊর্ধ্বে উঠে যাননি। কিন্তু সমস্যা হল ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলোকে খণ্ডাতে অন্য রকম কৌশল গ্রহণ করেছেন। তিনি দেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বিভ্রান্তির বলয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেই অভিযোগ গুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বা ইউনূস নিজেও স্বীকার করছেন না। বরং তিনি বলেছেন যে, তার ছোটখাটো ভুল থাকতে পারে। 

ড. ইউনূসের প্রধান বক্তব্য হল তিনি যেগুলো করেছেন সেগুলো ইচ্ছাকৃত কোন ভুল ত্রুটি নয়। তিনি এটিও বলতে চাচ্ছেন যে, সরকার আক্রোশবশত হয়েই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিচ্ছে। এটি তাকে হয়রানি করার সামিল। তবে সাধারণ আইনজ্ঞরা এবং বিচারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায় যে, ড. ইউনূসের মামলাগুলো প্রত্যেকটি গ্রহণযোগ্য মামলা এবং এর পেছনে কোন রাজনৈতিক অভিপ্রায় বা দুরভিসন্ধি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার। কারণ ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকার সময় রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে যে ভাবে একের পর এক প্রতিষ্ঠান করেছেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন তিনি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, এর চেয়ে বড় গর্হিত অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। 

গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছিল। সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান গুলোর মালিক এখন ড. ইউনূস কিভাবে হল সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হল এই প্রশ্নের উত্তর ড. ইউনূসের কাছে নেই। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেই অভিযোগ গুলো সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির আগে ড. ইউনূস কিভাবে দাবি করছেন যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হয়রানিমূলক ভিত্তিহীন এবং তিনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এটি একটি সুচতুর রাজনৈতিক চাল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

বিশ্লেষকদের মতে ড. ইউনূস তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ধামা চাপা দেওয়ার জন্য ত্রিমুখী কৌশল নিয়েছেন। প্রথমত, তিনি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। প্রভাবশালী মহল যেন তার ভাষায় নিপীড়ণ হচ্ছে এটা দেখে সরকারের ওপর রুষ্ট হয় সেই চেষ্টা করছেন ইউনূস প্রাণান্ত ভাবে। এ কারণে তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন তিনি গণমাধ্যমে পয়সা খরচ করে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।

দ্বিতীয়ত, ইউনূস বাংলাদেশের রাজনীতিতেও একটা উস্কানি দিচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো যেন তার পাশে দাঁড়ায় এজন্য তিনি গণতন্ত্র. ভোটাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলো এনে বিরোধী দলগুলোর মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

তৃতীয়ত, তিনি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি যে একজন দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাত বাজ এটি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য তিনি এক ধরনের মায়াবি নাটক করছেন। এখন দেখা যাক এই কৌশলের লড়াইয়ে কে জয়ী হয়। ড. ইউনূস না বাংলাদেশ?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭