ইনসাইড বাংলাদেশ

সারাজীবন মন্ত্রী থাকার গোপন রহস্য


প্রকাশ: 04/03/2024


Thumbnail

টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করলেও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবার পঞ্চমবারের মত সরকার গঠন করেছে। এই পাঁচ বারের সরকার গঠনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের নীতি গ্রহণ করে চলেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অনেক সময় অনেককে বাদ দিয়েছেন। এটি তার নিজস্ব হিসাব নিকাশ এবং কোন বিবেচনায় কাকে তিনি কখন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করছেন বা কাকে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিচ্ছেন সেটি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে।

তবে এই মন্ত্রিসভা গঠন এবং রদবদলে প্রধানমন্ত্রীর অপত্য স্নেহ ও সহানুভূতি দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকজনের প্রতি, যারা একাধিকবার মন্ত্রী থেকেছেন। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারাও মন্ত্রী থাকছেন সীমিত সময়ের জন্য। যেমন ১৯৯৬ সালে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ ২০০৮ এর মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি, ২০১৮ এর মন্ত্রিসভাতে তাদের জায়গা দেওয়া হয়নি, আর এবার মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে তাদের নাম-গন্ধ পর্যন্ত ছিল না।

আবার আওয়ামী লীগেরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আছেন, যারা একবার বা দুবার মন্ত্রী হয়েছেন, মাঝে তাদেরকে একবার বিরতি দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. রাজ্জাক ২০০৮ সালে মন্ত্রী হয়েছিলেন, ২০১৪ সালে তিনি মন্ত্রী হননি, ২০১৮ সালে মন্ত্রী হয়েছেন। এবার তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। এমনকি শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সাথী হিসেবে পরিচিত বেগম মতিয়া চৌধুরী মন্ত্রিসভায় ১৯৯৬ সালে ছিলেন, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালেও ছিলেন। এরপর তিনি গত দুই মেয়াদে আর মন্ত্রিসভার সদস্য নন। কিন্তু এর মধ্যে কিছু ভাগ্যবান ব্যক্তি রয়েছেন যারা মোটামুটি সারাজীবনের জন্য মন্ত্রিত্বের স্বাদ পেতে চলেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হলেন ইয়াফেস ওসমান। 

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে গঠিত মন্ত্রিসভায় ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তখন সেটি ছিল একটি বড় চমক। কারণ কোনো দিন রাজপথে আন্দোলন করেননি, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। একজন স্থপতি এবং শওকত ওসমানের পুত্র হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। এই পরিচয় নিয়ে তিনি প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন সকলে তাতে চমকিত হলেও খুব বেশি হতবাক হননি। কারণ ওই মন্ত্রিসভাটি ছিল শেখ হাসিনার চমকের মন্ত্রিসভা। অনেক আনকোরা নতুন ব্যক্তিকে তিনি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন চমক হিসেবে। কিন্তু ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় ইয়াফেস ওসমানের পদোন্নতি ঘটে। তিনি পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় সকলেই একটু নড়েচড়ে বসেন। ইয়াফেস ওসমানের সাফল্যের গোপন রহস্য কি তা বোঝার চেষ্টা করেন। এ সময় ছড়াকার হিসেবেও ইয়াফেস ওসমানের বিকাশ ঘটে এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে বা বিভিন্ন স্থানে তার ছড়ার গল্প আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভাতে তিনি একই মন্ত্রণালয় থেকে নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেন। এবারের মন্ত্রিসভাতেও তিনি রয়েছেন।

মন্ত্রিসভায় নতুন করে যোগদানের পর সকলেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেও ইয়াফেস ওসমান নীরব নিথর। তাকে সাধারণত পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমের সাথে হঠাৎ করে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে উপস্থিত হলেও তিনি প্রশ্ন শুনলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অথচ যে দেশের প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সাংবাদিকদের ডেকে প্রশ্ন করার ফ্রি লাইসেন্স দেন, সেদেশের একজন মন্ত্রী সাংবাদিকদেরকে প্রশ্ন করার শিক্ষা দেন এবং সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। তারপরও তিনি মন্ত্রী হওয়ার এক অনন্য রেকর্ড স্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশে মন্ত্রিসভায় কোনো ব্যক্তি এতদিন মন্ত্রী থাকেননি। তার গোপন রহস্য নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে।

এছাড়াও মন্ত্রিসভায় তৃতীয়বারের মতো আছেন ডা. দীপু মনি। প্রথমবার ২০০৯ সালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন, দ্বিতীয় দফায় তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, এবার তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর শিক্ষামন্ত্রী হওয়াটা ছিল যৌক্তিক। তবে শিক্ষামন্ত্রী থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া এক ধরনের পদাবনতি বলেই মনে করা হয়। তারপরও দীপু মনি মন্ত্রী হয়েছেন।

টানা তিনবার মন্ত্রী থেকে হ্যাটট্রিক করেছেন জুনাইদ আহমেদ পলক এবং নসরুল হামিদ। দুজনেই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশে কোন প্রতিমন্ত্রী টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছে কি না, সেটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে এবং এই গবেষণার উত্তর হল বাংলাদেশে জুনাইদ আহমেদ পলক এবং নসরুল হামিদ নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন। কেন তারা স্বপদে বারবার থাকছেন সেটি একটি গবেষণার বিষয়।

তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তাদের মন্ত্রী থাকার গোপন রহস্য জানতে চান। কারণ আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা কোনোদিন মন্ত্রী হননি বা একবার প্রতিমন্ত্রী-মন্ত্রী হয়েই কক্ষচ্যুত হয়েছেন। তাদের গোপন টিপস যদি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা জানতেন তবে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরত।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭