ইনসাইড বাংলাদেশ

ক্ষমতাকেন্দ্রে দুই আমলার গোপন লড়াই


প্রকাশ: 04/03/2024


Thumbnail

সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভাতে কোন টেকনোক্রেট মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ৪৪ সদস্যের মন্ত্রিসভায় মাত্র দুজন টেকনোক্রেট মন্ত্রী হয়েছেন। এদের একজন হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন। অন্যজন হলেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, যিনি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। 

সাধারণত প্রতি ১০ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকে মন্ত্রী করা হলে একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর নিয়োগের সুযোগ থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সুযোগ গ্রহণ করেননি। এখনও টেকনোক্র্যাট কোটায় দুজন মন্ত্রীর পদ খালি রয়েছে। আর টেকনোক্রেট কোটায় কেউ মন্ত্রী হবেন কিনা বা মন্ত্রিসভার আদৌ অদূর ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ হবে কিনা এ নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের জায়গা না পাওয়া এবং মন্ত্রিসভার আমলাদের ক্ষমতাবান না হয় হয়ে উঠার পেছনে নেপথ্যে দুই সাবেক আমলার লড়াই রয়েছে বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুজন আমলার স্নায়ু যুদ্ধের কারণে আমলাদের কেউই এখনও উপদেষ্টা বা মন্ত্রী হতে পারছেন না। 

টানা চতুর্থ মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলে একজন মাত্র সাবেক আমলা উপদেষ্টা হয়েছেন। শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা হন ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। ধারণা করা হয়েছিল, আরও কয়েকজন আমলা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন বা তারা সরকারের কোন নীতি নির্ধারক পদে অভিষিক্ত হবেন। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। আবুল কালাম আজাদ, ড. মোহাম্মদ সাদিক সংসদ সদস্য হলেও তারা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি। 

নির্বাচনের পরপরই আমলাদের মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা ড. আহমদ কায়কাউস বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সরকার তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। তার এই পদত্যাগের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি হয়তো মন্ত্রী হবেন। এ কারণে সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করে তিনি তার বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং ওয়াশিংটন থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি। 

আবার নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটিতে দায়িত্ব পালন করা কবির বিন আনোয়ারও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন কিংবা উপদেষ্টা হতে পারেন এমন গুঞ্জন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবির বিন আনোয়ার কেবল আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের মধ্যে দিয়েই তার রাজনৈতিক জীবনকে এখন পর্যন্ত সীমিত রেখেছেন। মাত্র ১৪ দিনের জন্য তিনি মন্ত্রিসভা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। এরপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং এইচ টি ইমামের আসনে বসে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলেন। যদিও পিএলআরে থাকার কারণে তাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রাখা হয়নি। তবে নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি প্রশিক্ষণ সহ সারা দেশে লিয়াজোঁ রক্ষার কাজ করেছিলেন। 

কবির বিন আনোয়ারকে মনে করা হয় আওয়ামী ঘরানার রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে উঠে আসা এই মেধাবী আমলা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। প্রতিকূল পরিবেশে নানা চড়াই উতরাই পার করে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছিলেন।তাকে মনে করা হয় আওয়ামী পন্থিদের নেতা হিসেবে। অন্যদিকে ড. আহমদ কায়কাউস সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করার মতোই। তিনি পেশাদার আমলা হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী ঘরানার মতো তার কোন পরিচিত ছিল না। তবে মেধাবী এই আমলার তার নিজের যোগ্যতায় এবং মেধা দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন এবং মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেওয়া হয়। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে চলে যান বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে। কিন্তু অনেকে মনে করেন যে, তিনি আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী। উড়ে এসে জুড়ে বসে তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। আর এই দুজন আমলার মধ্যে এক ধরনের স্নায়ু দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং দুই ঘরানার আমলারা দুজনকে সমর্থন করে। তাদের এই স্নায়ু যুদ্ধের কারণে সাবেক আমলারা সরকারের নীতি নির্ধারক স্থানে জায়গা পাচ্ছেন না বলে অনেকে মনে করেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭