প্রকাশ: 05/03/2024
চলতি
বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি
দুর্বল ব্যাংক সবল বা ভালো
ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে
দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে
সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে হবে। চলতি
বছরের মধ্যে নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী
বছর থেকে চাপ দিয়ে
ব্যাংক একীভূত করা হবে। সোমবার
(৪ মার্চ) দুপুরে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)
প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় এমন
মতামত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দুর্বল
ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে
একীভূত করা হবে—কেন্দ্রীয়
ব্যাংক এমন পরিকল্পনা জানানোর
পর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে যায় বিএবির প্রতিনিধিদলটি।
এ সময় তাদের কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংক
একীভূত করার প্রেক্ষাপট, প্রক্রিয়া
ও সময়সীমা জানানো হয়। গভর্নর আব্দুর
রউফ তালুকদার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই আলোচনায় নেতৃত্ব
দেন। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের পক্ষে ছিলেন বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের
চেয়ারম্যান।
গত ৩১ জানুয়ারি সব
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংক একীভূত
করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ব্যাংকার্স সভায়
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন,
দেশের মোট ৬১টি ব্যাংকের
মধ্যে ৪০টির মতো ব্যাংক ভালো
অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে
৮ থেকে ১০টি ব্যাংক
একীভূত হতে পারে। একীভূত
হওয়ার লক্ষ্যে ভালো ও দুর্বল
ব্যাংকের এমডিদেরকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করার পরামর্শ
দিয়েছিলেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বৈঠক সূত্রে জানা
গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাংক চেয়ারম্যানরা
জানতে চান, কিসের ভিত্তিতে
ব্যাংক একীভূত করা হবে, খারাপ
সম্পদের দায় কে নেবে
এবং একীভূত হলে ভালো ব্যাংকগুলো
খারাপ অবস্থায় পড়বে কি না।
সভার
সূত্র জানায়, আলোচনার সময় ব্যাংক খাতের
সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা পথনকশার
কথা তুলে ধরেন কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বৈঠকে বলা হয়, বিদ্যমান
নীতিমালা অনুযায়ী চলতি বছরের আর্থিক
তথ্যের ভিত্তিতে আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে দুর্বল
ব্যাংকের ব্যবসা সীমিত করে দেওয়া হবে।
এরপরই ব্যাংকের একীভূত কিংবা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। দুর্বল
ব্যাংক চিহ্নিত করা হবে মূলধনঘাটতি,
উচ্চ খেলাপি ঋণ, তারল্য এবং
প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের কতটা ঘাটতি রয়েছে
তার ভিত্তিতে।
বৈঠকে
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়ে দিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে
নিজের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী
বছর থেকে চাপ দিয়ে
দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে দেওয়া হবে।
দুর্বল ব্যাংক সবল করতেই একীভূত
করার এই উদ্যোগ। তবে
একীভূত হওয়ার কারণে কোনো ব্যাংক খারাপ
পরিস্থিতিতে পড়বে না। কোন
প্রক্রিয়ায় একীভূত হওয়ার কার্যক্রম পরিচালিত হবে, তা নিয়ে
শিগগির নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
উদ্বেগ
নেই ব্যাংক মালিকদের
এদিকে বিএবি
চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন,
‘ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ
ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভারত,
মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন
দেশে এর আগে ব্যাংক
একীভূত হয়েছে। যেকোনো ব্যাংকের পরিস্থিতি কোনো কারণে খারাপ
হয়ে যেতে পারে। সারা
পৃথিবীতে ব্যাংক খারাপ হয়, আমেরিকাতেও হয়েছে।
আমাদের এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু
ব্যাংক খারাপ হয়ে পড়েছে। তবে
বেশির ভাগ ব্যাংক ভালো
আছে।
নজরুল
ইসলাম মজুমদার আরও বলেন, ‘দুর্বল
ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে
একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ
ব্যাংক কাজ করছে। আমরা
বলেছি, জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মানতে আমরা বাধ্য। আমরা
শেয়ারধারী, আজীবন চেয়ারম্যান পদে থাকব না।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে।
গভর্নর আমাদের বলেছেন, এক বছরের মধ্যে
একীভূত করার কাজ শেষ
হবে’।
বিএবি
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিরীক্ষা কমিটির
হিসেবে ১০ শতাংশ ব্যাংক
খারাপ করছে। এটা হতেই পারে।
ব্যাংক একীভূত করা হলে ভালো
বা খারাপ ব্যাংক, কারও কোনো ক্ষতি
হবে না। একীভূত হলে
খারাপ ব্যাংক ভালো হবে, ভালো
ব্যাংক আরও ভালো হবে।
এতে আমাদের কোনো উদ্বেগ নেই।’
সভায়
আলোচিত বিষয় সম্পর্কে বাংলাদেশ
ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল
হক বলেন, ব্যাংক খাতের জন্য পথনকশা দেওয়া
হয়েছে। সেখানে ব্যাংক একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ব্যাংক অধিগ্রহণ ও একীভূত হওয়া
সারা পৃথিবীর একটি চর্চা। আমরা
এ নিয়ে একটি নীতিমালা
প্রণয়ন করব। এতে আতঙ্কিত
হওয়ার কিছু নেই। দুর্বল
ব্যাংক শক্তিশালী করতে এই উদ্যোগ।
এটা ব্যাংক চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে।
মেজবাউল
হক আরও বলেন, ‘শুধু
দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে
নয়, দুই সবল ব্যাংক
আরও শক্তিশালী হতে একীভূত হতে
পারে। যাদের বড় গ্রাহক রয়েছে,
সেই গ্রাহকই সেই ব্যাংকের সম্পদ।
ফলে সম্পদ খারাপ হলেও গ্রাহক দেখে
কেউ দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। নিজের
ইচ্ছায় ব্যাংক একীভূত হতে পারে, আবার
চাপ দিয়েও এটা করানো হতে
পারে।’
ব্যাংকগুলোর পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন ইস্টার্ণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু, ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, ইউসিবির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন চেয়ারম্যান।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭