ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কেন কঠোর অবস্থানে বিএনপি


প্রকাশ: 05/03/2024


Thumbnail

বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে যেহেতু প্রতীক ছাড়া আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন করছে, এজন্য বিএনপির যারা উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী তাদেরকে মৌন সম্মতি দেয়া হতে পারে, বিএনপি এক্ষেত্রে উপেক্ষার নীতি অনুসরণ করবে এমন কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ছিল। বিএনপির যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তারাও এনিয়ে তৎপর ছিলেন এবং বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য বিএনপির উপজেলা প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন, জনসংযোগ শুরু করেছেন। কিন্তু গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিলেন যে, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং উপজেলা নির্বাচনে যদি বিএনপির কোন নেতা অংশগ্রহণ করেন তাহলে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। 

বিএনপির এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় পর্যায়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী বিপুল সংখ্যক বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা এ সিদ্ধান্তে হতবাক। তারা মনে করছেন, এটি বিএনপির জন্য আরেকটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এবং এ সিদ্ধান্তের ফলে বিএনপির বহু নেতা দল ছেড়ে চলে যাবেন। এমনিতেই ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএপিতে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত এবং আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। তারা এক ধরনের হতাশার মধ্যে আছেন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে বিএনপির কঠোর অবস্থান দলটিকে আরও সংকটে ফেলবে বলে অনেকে মনে করছেন। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে এক ধরনের কঠোর অবস্থানে গেলে এবং সেই অবস্থানে বিএনপি কতটুকু সংহত থাকতে পারবে সেটি দেখার বিষয়। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, বিএনপি একাধিক কারণে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতারা বলছেন যে, উপজেলা নির্বাচনে যদি দলীয় নেতারা অংশগ্রহণ করতো তাহলে এ সরকারকে একটা বৈধতা দেয়া হয়। নির্বাচন কমিশনকেও বৈধতা দেওয়া হয়। বিএনপি যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করেনি সে কারণে উপজেলা নির্বাচনও তাদের করা উচিত নয়। 

বিএনপির দ্বিতীয় যুক্তি হল, উপজেলা নির্বাচন করা হলে দলের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে, একাধিক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং দলের যেহেতু তদারকি থাকবে না সেজন্য এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিতে বিভক্তি আরও তীব্র হবে। 

তৃতীয়ত, বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করছেন, তাদের যে সাংগঠনিক অবস্থা সে পরিস্থতিতে উপজেলা নির্বাচনে গেলে ভরাডুবি হবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যেহেতু এবার স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করছে, কাজেই নির্বাচনের মাঠে তাদের আধিপত্যই সবচেয়ে বেশি থাকবে। এরকম বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচন না করাই উচিত। 

তবে একাধিক মহল মনে করছেন যে, উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। নানা বিষয় বিবেচনা করেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে তার প্রধান কারণ হচ্ছে, দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না এবং মনোনয়ন বাণিজ্যও করা যাবে না। তাছাড়া বিএনপি যে অবস্থা নিয়ে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করেনি সে অবস্থান থেকে এখন তারা সরে এলে আন্তর্জাতিক মহলেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হবে। বরং উপজেলা নির্বচনকে উপেক্ষার মাধ্যমে তারা ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে অস্বীকার করার অবস্থানেই থাকলো। কিন্তু বিভিন্ন মনে করছেন যে, উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির কি লাভ হবে। 

বিএনপির অনেকেই মনে করেন এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে শঙ্কাটি বিএনপির মধ্যে বিরাজ করছে তা হল এই উপজেলা নির্বাচন করার ফলে বিএনপিকে হয়তো আরেকটা ভাঙ্গনের মুখোমুখি হতে হবে। কারণ বহু প্রার্থী দলের এই সিদ্ধান্ত মানবে না এবং তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭