মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আর নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আকাশ পাতাল পার্থক্য। দুই অবস্থান যেন দুই মেরুতে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছিল তারা বর্তমান সরকারকে ফেলে দিতে চায়, তৎকালীন সরকারের পান থেকে চুন খসলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিত। এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর জনসভা করা, না করা ইত্যাদি নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাথা ঘামিয়েছে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এ নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস মায়ের ডাকের নেতার বাসভবন পর্যন্ত দৌড়ে গেছেন। সরকারের ব্যাপারে তারা নেতিবাচক এরকম একটি বার্তা দিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল তৎপর। ড. ইউনূসের ব্যাপারেও সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অতি উৎসাহি দেখা গেছে। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একেকটি পদক্ষেপের সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরেকটি বিবৃতি এসেছে। কিন্তু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন এবং তার প্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি সরকার গঠিত হওয়ার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পাল্টে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে। নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পরপরই মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বার্তা দিয়েছেন। তিন সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দল সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন এবং তারাও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবসা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে চায়। এর মধ্যে সব চেয়ে বড় আগ্রহের জায়গা হল তেল গ্যাস উত্তোলন। আগামী ২০ মার্চ তেল গ্যাস উত্তোলনের জন্য পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক টেন্ডার দেবে এবং এই টেন্ডারে মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্সিম মবিল অংশগ্রহণ করতে চায়। মার্কিন প্রতিষ্ঠান যেন তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অনুমতি পায় এজন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন মরিয়া চেষ্টা করছে। সরকারের সব দোষ ত্রুটিগুলোকে তারা উপেক্ষা করেছে।
যদিও পেট্রোবাংলা থেকে বলা হয়েছে যে, তারা ২০টি জোনে ভাগ করবে এবং আলাদা আলাদা টেন্ডার করবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কাজের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় ব্যবসার আগ্রহ জায়গা হল বোয়িং বিক্রি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। বিশেষ করে বিমান সামনের দিনগুলোতে যে নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সেখানে যেন বোয়িংকে রাখা হয় সেজন্য সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্র দেন দরবার করছে।
তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে চায়। আর এ রকমই একটি বিনিয়োগের প্রস্তাবনাও সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশ একটি বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। এখানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনীতি দ্রুত অগ্রসর মান। এই দেশটিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভ। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এতে এই অঞ্চলে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ন থাকবে।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আগ্রহের জায়গা হল সামরিক খাত এবং সরকারের কাছে অস্ত্র বিক্রি। সেই বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র অনেক দূর এগিয়েছে। আর এ সমস্ত কারণে ড. ইউনূসের মামলা, তার অর্থপাচারের অভিযোগে চার্জশিট নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। ড. ইউনূসের ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতার একটি বড় কারণ হল ব্যবসা এমনটি মনে করছেন অনেকে।