ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রসারিত হচ্ছে নারী কর্মকর্তাদের অবস্থান


প্রকাশ: 08/03/2024


Thumbnail

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সুদৃঢ় প্রশাসনের সর্বস্তরে নারী কর্মকর্তাদের অবস্থান। জ্যেষ্ঠ সচিব থেকে সহকারী কমিশনার পর্যন্ত প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে নারীদের সুদক্ষ নেতৃত্ব রয়েছে।

আগামী দিনে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের আরো উজ্জ্বল উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন নবীন ক্যাডার কর্মকর্তারা। ফলে নারী কর্মকর্তা পুরুষ কর্মকর্তাদের মতো নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৮৫ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ১০ জন নারী। সে হিসাবে সচিব পদের প্রায় ১২ শতাংশ নারী। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) মেয়েদের পদচারণ শুরু।

এরপর, একেবারেই কম ছিল প্রশাসনের উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা। যারা সচিবের মতো বড় পদে পদোন্নতি পেতেন, তাঁদেরও দায়িত্ব দেওয়া হতো তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিল্প, কৃষি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রথম নারী সচিব হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন তাঁরা।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ), মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন নারী সচিবরা।

এমনকি, শুধু সচিব পদেই নয়, এখন মাঠ প্রশাসনের নানা স্তরে নারীর অবস্থান বাড়ছে, হচ্ছে সুসংহত। শিক্ষায় নারী অংশগ্রহণ বেড়েছে। বিসিএসের ২৬টি ক্যাডারেই নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। ছেলেমেয়ের সমতা অর্জিত হয়েছে। চিকিৎসাসহ পেশাগত শিক্ষায় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতিতেও নারীর বিচরণ দেখা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষের সচেতনতাও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কর্মপরিবেশও ভালো হয়েছে, তবে এখনো বেশ ঘাটতি আছে। এ জন্য কর্মপরিবেশ আরো উন্নত করা দরকার বলে মনে করেন নারী কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, বিশেষ করে চাকরিজীবী মা-বাবার কথা বিবেচনা করে কর্মক্ষেত্রে উন্নত মানের ডে-কেয়ার থাকা উচিত। এ ছাড়া নারীর জন্য আরো উন্নত স্যানিটেশনব্যবস্থা, পুরুষদের প্রথাগত মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনতা তৈরিসহ আরো কিছু কাজ করলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আরো সুসংহত হবে।

ইতিবাচক নানা ক্ষেত্রেই ফল নিয়ে আসবে যদি প্রশাসনে নারীর অবস্থান বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ ৮ মার্চ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

বর্তমানে নারীরা সামলাচ্ছেন মাঠ প্রশাসন। আটজন বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যে একজন নারী।

ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন উম্মে সালমা তানজিয়া। দ্বিতীয় নারী বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এ ছাড়াও, ৬৪ জন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মধ্যে ৭জনই নারী।

১। হবিগঞ্জে জেলায় জিলুফা সুলতানা। (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা)

২। মৌলভীবাজারে উর্মি বিনতে সালাম। (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা)

৩। লক্ষ্মীপুর জেলায় সুরাইয়া জাহান। (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা)

৪। ফেনী জেলায় শাহীনা আক্তার। (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা)

৫। মানিকগঞ্জ জেলায় রেহেনা আকতার। (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা)

৬। ঝালকাঠি জেলায় ফারাহ্ গুল নিঝুম। (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা)

৭। গাইবান্ধা জেলার কাজী নাহিদ রসুল। (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা)

সম্প্রতি জেলা প্রশাসক সম্মেলন চলাকালে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া আট বিভাগীয় কমিশনারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, সাত ভাই চম্পা (আটজন বিভাগীয় কমিশনার)। 

একাধিক নারী ডিসি জানান, ‘প্রথমেই একজন নারীকে প্রমাণ করতে হয়, তিনি এ পদের যোগ্য কি না। তবে ধীরে ধীরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরো পরিবর্তন হবে’।

বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা বলেন, ‘নারীর প্রতি সব বৈষম্য দূর করে তাঁদের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারে পরিণত করার জন্য নারী নেতৃত্ব বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। সংবিধানে নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রয়েছে’।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি শাখার তথ্য মতে, এখন সারা দেশে ৪৮০ জন ইউএনওর মধ্যে ১৪০ জন নারী। দায়িত্বরত ইউএনওদের মধ্যে এই হার ২৯ শতাংশ। উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও পদই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁরাই উপজেলায় সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা উপজেলার অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কাজে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন।

এ ছাড়া সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত দপ্তর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছেন ১৩৩ নারী। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব ৫৮ জন, যুগ্ম সচিব ১৮৬ জন, উপসচিব ৩৯৬ জন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ৬০০ জন, সহকারী সচিব পদে ২৮৪ জন নারী কাজ করছেন। তাঁরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রকল্পসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীর কর্মপরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় আজ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে নারীরা নেতৃত্বে আছেন। এটি এক দিনে হয়নি। ধীরে ধীরে হয়েছে। তাঁরাও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি আশা করেন, আগামী পাঁচ বছরে প্রশাসনে নারীর অবস্থান আরো উচ্চমাত্রায় যাবে'।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭