ইনসাইড বাংলাদেশ

কাঁচা পেঁয়াজে বাজার সয়লাব, উৎপাদনে ধ্বস!


প্রকাশ: 08/03/2024


Thumbnail

রাজবাড়ি এবং পাবনায় দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। বিশেষ করে দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ যোগান আসে এখান থেকে কিন্তু রাজবাড়ি এবং ফরিদপুরের হালি পেঁয়াজের উৎপাদনে ধ্বস নামতে পারে। ফরিদপুর ও রাজবাড়ি জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পেয়েছেন এই প্রতিবেদক।

সম্প্রতি পেঁয়াজের মোট চাহিদা মেটাতে হচ্ছে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে। অন্যদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা থাকলেও দেশে ভারতীয় পেঁয়াজ সেভাবে আসেনি। ফলে মোট চাহিদা দেশে উৎপাদিত মুরিকাটা এবং হালি পেঁয়াজ দিয়ে মেটানো হচ্ছে। এখন মুরিকাটা জাতের পেঁয়াজের মৌসুম শেষ এবং মূল চাহিদা মেটানো হচ্ছে কাঁচা হালি পেঁয়াজ থেকে। দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ায় দামও বাড়ছে আর বাড়তি দামের আশায় বাজারগুলো কাঁচা পেঁয়াজে সয়লাব। 

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুরের কয়েকজন কৃষক বলেন, এখন বাজারে কাঁচা পেঁয়াজের যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে যে পেঁয়াজের একটু গুটি হয়েছে সেই কাঁচা হালি পেঁয়াজ তুলে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে এবং ভালো দামও পাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে জমিতে ৫০ মন পেঁয়াজ হওয়ার কথা কিন্তু অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলার কারণে ২০ মনের মত হচ্ছে ফলে উৎপাদন অর্ধেকের কম। অন্যদিকে আগাম উঠানো কাঁচা পেঁয়াজ কোনোভাবেই ঘরে রাখা সম্ভব না ফলে সারাবছর এবার কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ রাখা কঠিন হবে।

সালথার কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, মৌসুমে যে পেঁয়াজ ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা বিক্রি করতে হয় সেই পেঁয়াজ এখন কাঁচা অবস্থায় ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা মনে বিক্রি হচ্ছে। আর এই বাড়তি লাভের কারণে আমরা তাড়াহুরো করে কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করছি। শুরুতে অল্প কিছু কৃষক পেঁয়াজ তুললেও এখন প্রায় সবাই কমবেশি পেঁয়াজ তুলছে এবং অধিকাংশ পেঁয়াজই কাঁচা। 

মধুখালী উপজেলার মেগচামীর কৃষক কামরুল সরদার বলেন, আমাদের মাঠের অনেক পেঁয়াজ কাঁচা অবস্থায় তোলা হচ্ছে। কাঁচা পেঁয়াজ তোলার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক এখন তাড়াহুরো করে কাঁচা পেঁয়াজ তুলছে। দ্বিতীয়ত এই হালি পেঁয়াজ পাঁকাতে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে কিন্তু এখন অগ্রিম পেঁয়াজ তুলে সেই জমিতে অগ্রিম পাটের চাষ করা যাচ্ছে ফরে কৃষকরা কোনোভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না।

বালিয়াকান্দি বাজারের কয়েকজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে ঢুকলে হঠাৎ করেই বাজার পড়ে যাবে তাই কৃষকরা তাড়াহুড়ো করে কাঁচা পেঁয়াজ তুলছে বেশি দামের আশায়। এখন বাজারে এত পেঁয়াজ ওঠে যা দেখলে মনে হয় পেঁয়াজের পূর্ণ মৌসুম চলছে কিন্তু এভাবে কাঁচা পেঁয়াজ উঠানোয় উৎপাদন অর্ধেক হচ্ছে এবং পরিপক্ক পেঁয়াজের সংকট হবে।

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর রহমান বলেন, বেশি দামের আশায় কৃষকরা এখন যে পেঁয়াজ উত্তোলন করছে সেটা কাঁচা পেঁয়াজ যা বেশিদিন ঘরে সংরক্ষণ করা যাবে না। এছাড়া অপরিপক্ক পেঁয়াজ উত্তোলনের কারণে মোট উৎপাদনে কিছুটা হলেও ঘাটতি হবে।

রাজবাড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কৃষকদের বারবার সতর্ক করার পরেও তারা কাঁচা পেঁয়াজ তুলছেন এভাবে চলতে থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা ব্যহত হবে। 

ফরিদপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, কাঁচা পেঁয়াজ কিছু কিছু উপজেলার কৃষকরা তুলছেন কিন্তু সেটার পরিমাণ কম। আমরা কৃষকরদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যাতে তারা কাঁচা পেঁয়াজ উত্তোলন না করে পরিপক্ক হওয়ার সুযোগ দেয়।

কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, এভাবে কাঁচা পেঁয়াজ উত্তোলনের ফলে এবার রাখি পেঁয়াজ বা ঘরে সংরক্ষণ করার জন্য পেঁয়াজের ঘাটতি হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭