ইনসাইড পলিটিক্স

মন্ত্রীরা সংগঠনের সময় দেন কম


প্রকাশ: 08/03/2024


Thumbnail

টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবার ৪৪ সদস্যের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের প্রচুর কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ২০০৮ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছিল। তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একটা কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সরকার এবং দলকে আলাদা করার নীতি নিয়ে এগোচ্ছিলেন। যারা মন্ত্রিত্ব পাবেন তারা দলের নেতৃত্বে থাকবেন না- এমন একটি পদ্ধতি তিনি অলিখিত ভাবে চালু করেছিলেন। এর সুফল এবং কুফল দুটো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম আলাপ আলোচনা বিতর্ক রয়েছে। 

তবে ২০০৯, ১৪ এবং ১৮ এর পর এবার মন্ত্রিসভায় তিনি প্রচুর কেন্দ্রীয় নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান রয়েছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ড. হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনি রয়েছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রোকেয়া সুলতানা, শামসুন্নাহার চাঁপাসহ আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হল যে দু একজন ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা যারা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তারা সংগঠনের জন্য সময় দেন খুবই কম। দলীয় কার্যালয়ে তাদেরকে যেমন দেখা যায় না, তাদেরকে পাওয়া যায় না সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী এবং সংগঠনের নেতা। তিনি সংগঠনের জন্য যথেষ্ট সময় দেন। তাকে নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায়। অফিস এবং দল পরিচালনায় দুটিতে তিনি সমানভাবে ব্যস্ত থাকেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকেও দলীয় কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয় দেখা যায়। তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে সপ্রতিভ অংশগ্রহণ করেন। সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ আলোচনা এবং বৈঠকও করেন। 

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককেও সাংগঠনিক তৎপরতায় অত্যন্ত সক্রিয় দেখা যায়। একই ভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় আব্দুর রহমানও। কিন্তু আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. দীপু মনি এবার মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ম্রিয়মাণ। তাকে মন্ত্রণালয়ের কাজে যেমন উজ্জ্বল দেখা যাচ্ছে না, তেমনই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তিনি অনেকটাই নিষ্প্রভ। 

নতুন যারা মন্ত্রী হয়েছেন, তারা সংগঠনের জন্য কতটুকু সময় দেবেন তা নিয়ে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের যে সমস্ত মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালন করছেন তারা সংগঠনের জন্য সময় দেন খুবই কম এবং যা না বললেই চলে। 

রাজনৈতিক ভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর একটি হল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির সম্পর্ক সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর এই কারণেই দীর্ঘদিনের রীতি ছিল যে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে যিনি থাকবেন তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হবেন। কিন্তু সেই রীতি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে কতটুকু সক্রিয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন। দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত মেয়াদে ফরহাদ হোসেনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এবার তিনি পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এই মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক নেতাদের অনেক বিষয় থাকে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে পছন্দের ব্যক্তিদের রাখা না রাখা ইত্যাদি নিয়ে এক ধরনের চেষ্টা তদবির সবসময় থাকে। এখানেও জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় খুব একটা দেখা যায় না। স্থানীয় পর্যায়ে তিনি অনেক ছোট নেতা। যার দলে বড় নেতারা তার কাছে যেতে যেমন অস্বস্তি প্রকাশ করেন। তিনিও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে খুব একটা জড়ান না।

ত্রাণ মন্ত্রণালয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যেখানে সরাসরি রাজনীতির সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু এই মন্ত্রণালেয়র প্রতিমন্ত্রীও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে খুব একটা ব্যস্ত রাখেন না। মন্ত্রীদের সংগঠনে সময় কম দেওয়া কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং অতৃপ্তির বেদনা কাজ করে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭