ইনসাইড বাংলাদেশ

এবার কি শিল্পমন্ত্রী?


প্রকাশ: 08/03/2024


Thumbnail

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের একেক জন মন্ত্রী নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত হন। স্বাধীনতার পর যেমন ‘টুপি মোশতাক’ বিভিন্নভাবে আলোচিত ছিল, ‘খুনি মোশতাক’কে বলা হত ‘টুপি মোশতাক’। তার টুপির নীচে সব শয়তানি লুকিয়ে থাকত বলে আওয়ামী লীগের নেতারা ঠাট্টা মশকরা করত। এভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রী তাদের অতিকথন, ভুলনীতি এবং ব্যর্থতার জন্য একটি করে উপাধি পান। সেই উপাধি নিয়েই তাকে চলতে হয় সারাজীবন। যেমন, এরশাদ সরকারের আমলে ‘চিনি জাফর’ ছিলেন আলোচিত মন্ত্রী। দুর্গন্ধ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এর নাম আলোচনায় ছিল বিভিন্ন সময়। 

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে বলা হত ‘মিথ্যে মওদুদ’। এছাড়াও একাধিক মন্ত্রীর একাধিক উপাধি ছিল তাদের অতিকথন এবং অযোগ্যতার কারণে। 

গত মেয়াদেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী টিপু মুনশি নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত ছিলেন। বেফাঁস মন্তব্যের জন্য তাকে সবসময় তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হতো। এবার মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে গত ১১জানুয়ারি। মন্ত্রিসভা গঠনের পর অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মন্ত্রীদেরকে অনেক সংযত এবং পরিমার্জিত দেখা গেছে। মন্ত্রীরা কথা বলেছেন কম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যেও তাদের কোন প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু একমাস পেরোতে না পেরোতেই কয়েকজন মন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্য। সরকারের ভেতরে বাইরে এক ধরনের কৌতূহল তৈরি হয়েছে। 

শুধু মন্তব্যই নয়, বিভিন্ন উদ্ভট সিদ্ধান্তের কারণেও দুই একজন মন্ত্রী এইবার মন্ত্রিসভায় চিহ্নিত হচ্ছেন। এই মন্ত্রীরাই কি আলোচিত হবেন এবারের পাঁচ বছরের মন্ত্রিসভায়—এই প্রশ্নটি বিভিন্ন মহলে উঠেছে৷ 

যাদেরকে নিয়ে এরকম বিতর্ক ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী অন্যতম। শিল্পমন্ত্রী সম্প্রতি ইফতারে বরই তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু পুষ্টি বিজ্ঞানীরা তার এই বরই তত্ত্বকে সমর্থন করেনি।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, খালি পেটে বরই গ্যাস তৈরি করতে পারে এবং এটি ভাল নয়। অন্য কিছু খাওয়ার পর বরই খাওয়াটা ভাল। কাজেই শিল্পমন্ত্রীর এই বক্তব্য বিজ্ঞান ভিত্তিক নয়। তার বরই তত্ত্ব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে, সমালোচনা হচ্ছে। 

যদিও কেউ কেউ মনে করেন যে, দেশি ফল খাওয়ার যে প্রবণতা তাকে উৎসাহিত করার জন্য মন্ত্রীর এ বক্তব্য। বক্তব্যের মধ্যে কোন কিছু ভুল নেই। তবে এ নিয়ে সমালোচকরা বিশেষ করে জাসদের হাসানুল হক ইনু, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী শিল্পমন্ত্রীর ব্যাপক সমালোচনা করছেন। 

শুধু কথায় নয়, কাজের ক্ষেত্রেও শিল্পমন্ত্রীর মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর হঠাৎ করে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো চিনির দাম অনেক বাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে হৈচৈয়ের পর আবার রাতারাতি সেই চিনির দাম প্রত্যাহার করা হয়। 

গত পরশুদিন আবার এক লাফে টিসিবির চিনির দাম ৩০টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার তা কমিয়ে ৭০ টাকায় নিয়ে আসা হয়। চিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং চিনির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে তার দায়-দায়িত্ব শিল্পমন্ত্রীর ঘাড়ে বর্তায়। 

প্রশ্ন উঠেছে যে, শিল্পমন্ত্রী কিভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর দাম এক লাফে অনেক খানি বাড়িয়ে দিলেন। আবার কিভাবে তা রাতারাতি পরদিন কমিয়ে দিলেন। সিদ্ধান্ত গ্ৰহণে এই অস্থিরতা কেন? একদিকে বেফাঁস মন্তব্য। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের কাজে সিদ্ধান্তহীনতা, একটি সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করার পর আবার দ্রুত তা পরিবর্তন করা, সব কিছু নিয়ে এবার মন্ত্রিসভায় শিল্পমন্ত্রী সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত মন্ত্রী হন কিনা সেটি নিয়েই অনেকে ভাবছেন। এখন দেখার বিষয় সামনের দিনগুলোতে তিনি কি বলেন এবং কি করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭