প্রকাশ: 10/03/2024
আওয়ামী
লীগের ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচী একাত্তরের ১০ মার্চও সারা
দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ
মেনে সারা দেশে সরকারি
ও আধা সরকারি অফিসের
কর্মচারীরা কাজে যোগদান থেকে
বিরত থাকেন। সরকারি ও বেসরকারি ভবন,
ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
শীর্ষে কালো পতাকা ওড়ে।
রাজারবাগ পুুলিশ লাইন, থানা ও হাইকোর্টের
প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কালো পতাকা উত্তোলন
করা হয়। সরকারি, বেসরকারি
ও ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর গাড়িগুলোও কালো পতাকা লাগেয়ে
রাজপথে চলাচল করে। অনেক বাড়িতেও
বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছিল।
আওয়ামী
লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
এক বিবৃতিতে বলেন, ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসাপরয়ণ মনোবৃত্তি
নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত।
তারা বাংলাদেশের সর্বত্র এক ত্রাসের পরিবেশ
সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের ভীতসন্ত্রস্ত করে বাংলাদেশ ত্যাগে
বাধ্য করছে।
বঙ্গবন্ধু
বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট বাংলাদেশ
থেকে জাতিসংঘের কর্মচারীদের অপসারণের অনুমতি দিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশীদের জীবন ও সম্পদ
কতটা বিপন্ন করে তুলেছেন, জাতিসংঘ
মহাসচিবের এই নির্দেশে তারই
স্বীকৃতি মেলে। জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুধাবন করা উচিত, কেবল
জাতিসংঘের কর্মীদৈর অপসারণ করলেই তাঁর দায়িত্ব শেষ
হয়ে যায় না। কেননা
যে হুমকি আজ উদ্যত, সেটি
গণহত্যার। সে হুমকি বাংলার
সাড়ে সাত কোটি মানুষের
জন্য জাতিসংঘ সনদে সংরক্ষিত মৌলিক
মানবাধিকার অস্বাীকৃতিরই নামান্তর। ধ্বাসকারী যত অস্ত্রেই সুসজ্জিত
থাকুন না কেন, কোনো
শক্তিই আর বাঙালিদের চূড়ান্ত
বিজয় থেকে বঞ্চিত করতে
পারবে না।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রঙ্গণে
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে সকালে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের গুম-খুন-হত্যা ও
নির্যাতনের প্রতিবাদে তখন পর্যন্ত যেসব
বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান কালো
পতাকা ওড়ানো হয়নি, ছাত্রলীগ নেতাদের এক বিবৃতিতে সেখানে
তা ওড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
ছাত্রলীগ
ও ডাকসু নেতাদের স্বাক্ষরিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্য আরেকটি বিবৃতিতে
বাঙালি সেনা, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর
সদস্যদের প্রতি পাকিস্তানি উপনিবেশবাদী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা না করার আবেদন
জানানো হয়।
অন্য
দিনগুলোর মতো এদিনও ছাত্র
ইউনিয়নের কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে
সামরিক প্রশিক্ষণ নেয় ও কুচকাওয়াজ
করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ
শেষে মিছিল বের করা হয়।
বিকেলে
প্রাদেশিক (পূর্ব পাকিস্তান) ন্যাপ ওয়ালির উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকা নিউমার্কেট এলাকায়
অনুষ্ঠিত হয় পথসভা।
‘লেখক-শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লেখক
ও শিল্পীরা ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল
বায়তুল মোকাররম থেকে শহীদ মিনার
পর্যন্ত যায়। ফরোয়ার্ড স্টুডেন্টস
ব্লক বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে জনসমাবেশের আয়োজন করে। সিভিল সার্ভিসের
দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের প্রতিনিধিরা সভায় মিলিত হয়ে
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলার আনুষ্ঠানিক
সিদ্ধান্ত নেন। চলচ্চিত্র প্রদর্শকেরা
অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাপক গণহত্যার প্রতিবাদে এদিন পাকিস্তান সরকারের
তথ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক
বিভাগ আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা
দেন।
রাজশাহী
শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করা
নৈশ কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়।
বিদেশী
সাংবাদিকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু
সকালে
বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে একদল
বিদেশী সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধু তাঁদের
বলেন, এপর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে।
এবার রক্ত দেওয়ার পালা
শেষ করার সময় এসেছে।
বাঙালি চায় রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক মুক্তি।
বঙ্গবন্ধু
তাদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা
কোন আপস করব না।
চট্টগ্রাম
বন্দরে অস্ত্রবাহী জাহাজ
পাকিস্তানের
সমরাস্ত্র নিয়ে আসা জাহাজ
‘এম এল সোয়াত’ এই
দিন চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে
নোঙর করে। জাহাজ থেকে
নামিয়ে সমরাস্ত্রগুলো বিভিন্ন সেনাছাউনিতে পাঠানোর জন্য বন্দরের বাইরে
ওয়াগন প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। চট্টগ্রাম
বন্দরের শ্রমিকেরা এসব সমরাস্ত্র জাহাজ
থেকে নামানোর নির্দেশ অগ্রাহ্য করেন। সামরিক বাহিনীকে দিয়ে সমরাস্ত্র ও
গোলাবারুদ নামানোর ব্যবস্থা করতে গেলে উপস্থিত
জনতার প্রতিরোধে তা নস্যাৎ হয়ে
যায়।৩
পশ্চিম
পাকিস্তানি নেতারা
লাহোরে
সাবেক পিডিএম প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানের আহ্বানে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের এক সভায় জাতীয়
পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের জন্য বঙ্গবন্ধু যে
পূর্বশর্ত দিয়েছেন, তার প্রতি নীতিগত
ভাবে পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়ে।
করাচিতে
কাউন্সিল মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জেড এইচ
লারি বলেন, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে
গণ হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে
ফিরিয়ে নেওয়ার যে দাবি করেছে,
তা অবিলম্বে পূরণ করা উচিত।
কিন্তু শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সাপেক্ষে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও
গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর-সম্পর্কিত দাবি দুটির বিবেচনা
স্থগিত রাখা উচিত বলে
তিনি বিবৃতি দেন।৪
সূত্র:
১. ইত্তেফাক, সংবাদ ও দৈনিক পাকিস্তান,
১১, ১২ ও ১৩
মার্চ ১৯৭১। ২. পূর্বোক্ত। ৩.
পূর্বোক্ত। ৪. পূর্বোক্ত
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭