ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

‘উগ্রনীতি’র কারণেই কি ভোটার হারাচ্ছেন ট্রাম্প?


প্রকাশ: 11/03/2024


Thumbnail

ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন অসম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি ছিলেন যার পূর্বে কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। পূর্বের ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় টিভি সেলিব্রেটি ও তারকা ব্যবসায়ী। পড়ন্ত বয়সে সেই ট্রাম্পই রাজনীতির মাঠে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। প্রচুর বিতর্ক ও উত্তেজনামূলক নির্বাচন অভিযানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে জয়ী হন ট্রাম্প। তখন, ট্রাম্পের অনুসরণকারীরা মনে করতেন, তিনি আমেরিকাকে আগের মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। সেসব ভোটারের মধ্যে এমন কিছু ভোটার ছিলেন, যারা জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছিলেন।

কিন্তু, ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতিতে পদচারণের পরই রিপাবলিকান পার্টি অনেক বেশি শ্বেতাঙ্গবান্ধব, অনেক বেশি প্রাচীনপন্থী, অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক এবং অনেক বেশি চরমপন্থী হয়ে উঠেছে।

নির্বাচনে আসার পর, হোয়াইট হাউসে বসে যখন যা ইচ্ছে তা করেছেন ট্রাম্প। অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ও তা নিয়ে মেক্সিকো ও নিজ দেশের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে তুমুল বিরোধে জড়িয়েছেন। এছাড়াও, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের উগ্র চর্চা এগিয়ে নিয়েছেন। আমেরিকান সমাজকে বিভক্ত করেছেন। 

চীনের সঙ্গে তুমুল বাণিজ্যিক-রাজনৈতিক বিরোধে জড়িয়েছেন। ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্তে ও তিনি চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করেছেন। এমনকি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিশ্লেষকরা এসব নীতিকে হঠকারি বলে সাব্যস্ত করেলেও ট্রাম্পের তাতে কিছু আসে যায়নি। 

এমনকি, নিজ দল ও প্রশাসনের কেউ এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে তাকে চাকরি থেকে বিদায় দিয়েছেন। একাধিক মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইন ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাও রয়েছেন এ তালিকায় রয়েছেন।

ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের ফলেই ঐতিহাসিক মিত্র ইউরোপ ও ন্যাটো জোটের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে মার্কিন প্রশাসনের। 

এমনকি ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত সব কর্মকাণ্ডের কারনেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক উষ্ণ করতে ভূমিকা রাখা, কাতারের অবরোধ নিরসনে মধ্যস্ততা, সর্বোপরি পূর্বসূরীদের মতো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কোনো যুদ্ধে না জড়ানোর পরও এ অঞ্চলের দেশগুলো তাকে খুব একটা বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। 

ট্রাম্পের গোঁয়ার্তুমির কারণে দলটি উদারপন্থী এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের কাছে তার আবেদন হারিয়ে ফেলেছে।

এমন অনেক রিপাবলিকান ভোটার আছেন, যারা গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিলেও এত দিনে তার ব্যক্তিগত আচরণ ও উগ্ৰনীতির কারণে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

ট্রাম্পের হাতে এখন যে পরিমাণ ভোটার আছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ভোটার আছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে। তার মানে এই নয় যে জো বাইডেনের নির্বাচনে জয়ী হওয়া খুব সহজ হবে। 

তবে, অধিকসংখ্যক ভোটার তার হাতে থাকার কারণে ভোটারদের অনুপস্থিতিজনিত সংকটে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারবেন।

ট্রাম্পকে এ নির্বাচনে জিততে হলে অবশ্যই তার অনুসারীদের প্রায় সবাইকেই ভোট দিতে নির্বাচনকেন্দ্রে আনতে হবে। 

এছাড়াও, রিপাবলিকানদের মধ্যে অনেক নারী এবং উদারপন্থী ভোটার ডেমোক্র্যাট শিবিরের সঙ্গে শক্তভাবে যুক্ত হয়েছেন, চরম রক্ষণশীল রাজ্য আইনসভাগুলোতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার কারণে।

এই 'গর্ভপাত নিষিদ্ধকরণ' নীতির কারণে তারা বলেছেন, ট্রাম্প ছাড়া যে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।

অনেক বয়স্ক রিপাবলিকান এখনো তাদের হৃদয়ে রোনাল্ড রিগ্যানের চেতনা ধারণ করেন। তারা বিশ্বের মানুষের কাছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা হিসেবে আমেরিকাকে দেখাতে চান।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত রিপাবলিকানদের কাছে ট্রাম্পের বিকল্প প্রার্থী ছিল। তিনি হলেন জাতিসংঘের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। ট্রাম্পের বিকল্প নেতা হিসেবে ভালোভাবেই উঠে আসছিলেন। 

১৪টি রাজ্যের সুপার টুয়েসডে প্রাইমারিতে নিকি হ্যালি হেরে যাওয়ায় ট্রাম্পের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। 

তবে, নিকি হ্যালি ট্রাম্পকে প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন দিয়ে যাননি। তিনি ভোটারদের বলেছেন, তারা চাইলে ট্রাম্পকে ভোট দিতেও পারেন, না–ও পারেন। 

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হবার ক্ষেত্রে সন্দেহ করার এটাও একটি বড় যৌক্তিক কারণ। নিকি হ্যালির সমর্থকদের একটি অংশ হয় ভোটদানে বিরত থাকবে, নয়তো জো বাইডেনকে ভোট দেবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭