প্রকাশ: 11/03/2024
একটা
সময় ছিল ব্যাংকে
টাকা জমা রেখে সুদ
বা মুনাফা মিলত, সেই সুদ বা মুনাফা দিয়ে
ব্যাংক হিসাব চালানোর খরচ মেটানোর পর
বাকি অল্প কিছু অর্থ
মিলত। তখন ব্যাংকে গ্রাহকের
আমানতের বিপরীতে দেওয়া সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে নিচে নেমে
গিয়েছিল। এতেই ব্যাংক থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন
অনেক গ্রাহক। মূলত মনে করা
হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নির্দেশে ঋণের সুদহার আটকে
রাখায় এমন পরিস্থিতি তৈরি
হয়েছিল।
বর্তমানে
সুদহারের সেই নির্দিষ্ট সীমা তুলে নেওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে ব্যাংকের
আমানতের সুদ। কোনো কোনো
ব্যাংক তো সঞ্চয়পত্র ও
বন্ডের চেয়ে বেশি সুদ
দিচ্ছে। ফলে অনেক আমানতকারী
আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছেন। আর
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো
এখন যে সুদ দিচ্ছে,
তাতে এখনই ব্যাংকে টাকা
রাখার উপযুক্ত সময় বলে মনে
করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ, পরে এত সুদ
না-ও মিলতে পারে।
চলতি
মার্চ মাসে ব্যাংকঋণের সুদের
হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩
দশমিক ১১ শতাংশ। আগের
মাস ফেব্রুয়ারিতেও ব্যাংকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ
ছিল ১২ দশমিক ৪৩
শতাংশ। ফলে ব্যাংকগুলো এখন
আমানতে কমবেশি ১০ শতাংশ সুদ
দিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক
সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ
টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে টাকা জমা
নিচ্ছে। আবার সুদের হার
ঊর্ধ্বমুখী থাকায় কিছু ব্যাংক ও
আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি আমানত নিচ্ছে না। তারা বিশেষ
আমানত পণ্য এখন বন্ধ
রেখেছে।
এদিকে
ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহারও বেড়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান ঋণের পাশাপাশি আমানতের
সুদহারও বাড়িয়েছে। চলতি মার্চ মাসের
জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ
১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ নিতে
এবং আমানতে ১২ দশমিক ৩৬
শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে পারবে
বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আমানতে এত
সুদ সবাই দিচ্ছে না।
সাধারণ
তত্ত্ব হলো, যে ব্যাংক
বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যত দুর্বল, তার
আমানতের সুদ তত বেশি।
ফলে সুদ বেশি দেখে
টাকা রাখবেন, নাকি ব্যাংক ও
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি ও ভাবমূর্তি দেখে
টাকা জমা রাখবেন, সেই
সিদ্ধান্ত আপনারই।
ব্যাংকগুলোতে
টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে
নানাবিধ হিসাব রয়েছে। যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন ও প্রতিদিন
লেনদেনের প্রয়োজন হয়, তারা চলতি
হিসাব খোলেন। এ ধরনের হিসাবে
সুদ সব সময় কম
থাকে। এরপর কম সুদ
থাকে সঞ্চয়ী হিসাবে। আর ব্যাংকগুলো বেশি
সুদ দেয় বিভিন্ন মেয়াদি,
স্থায়ী আমানত ও বিভিন্ন স্কিমে।
কোথায়
মিলছে বেশি মুনাফা
বাড়ছে
ব্যাংকঋণের সুদের
হার। কোনো কোনো ব্যাংকে
ঋণের সুদের হার ১৩ শতাংশ
ছাড়িয়ে গেছে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলো
আমানতের সুদহারও বাড়াতে শুরু করেছে। মার্কিন
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ঋণ আদায়ে মন্দা
ও ভাবমূর্তির সংকটের কারণে কিছু ব্যাংক আগে
থেকেই তারল্যসংকটে ছিল। তারা বাড়তি
সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ
করছিল। এখন মোটামুটি সব
ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকে টাকা
জমা রেখে ভালো মুনাফা
পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে তারল্যসংকটে থাকা
ব্যাংকগুলো বেপরোয়াভাবে সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের চেয়েও
বেশি সুদ দিয়ে টাকা
সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
জানা
গেছে, বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল
ব্যাংক (ইউসিবি) এখন সাড়ে পাঁচ
বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার
প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত নিচ্ছে।
ব্যাংক দুটি এ ধরনের
আমানতে ১৩ দশমিক ৪০
শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এ
ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে এক বছরের জন্যও
স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা যায়। সেগুলো
থেকে মাসে মাসে মুনাফা
পাওয়ার সুবিধা আছে। এক বছরের
স্থায়ী আমানতে ইউসিবি ১১ শতাংশ পর্যন্ত
সুদ দিচ্ছে।
চলতি
মার্চ মাসে ব্যাংকঋণের সুদের
হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩
দশমিক ১১ শতাংশ। আগের
মাস ফেব্রুয়ারিতেও ব্যাংকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ
ছিল ১২ দশমিক ৪৩
শতাংশ। ফলে ব্যাংকগুলো এখন
আমানতে কমবেশি ১০ শতাংশ সুদ
দিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক
সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ
টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে টাকা জমা
নিচ্ছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) ছয় বছরের জন্য
টাকা জমা রাখলে ১২
দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ
দিচ্ছে। আমানতে এ রকম বা
এর কাছাকাছি সুদ দিচ্ছে আরও
কিছু ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইডিএলসি এক বছর মেয়াদি
আমানতে ১০ শতাংশ, লংকাবাংলা
সাড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত
সুদ দিচ্ছে। মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স ৭ বছরে টাকা
দ্বিগুণ ও ১১ বছরে
টাকা তিন গুণ করার
প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা জমা
নিচ্ছে।
প্রতিটি
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
ওয়েবসাইটে নিয়মিত সুদহারের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।
আপনি চাইলে নিকটস্থ ব্যাংক শাখাতেও খোঁজ নিতে পারেন।
এতেও মিলতে পারে বাড়তি সুদের
খোঁজ।
ব্যাংকার
মেহমুদ হোসেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে ব্যাংক এশিয়া, এনআরবি ও সর্বশেষ ন্যাশনাল
ব্যাংকে কাজ করেছেন।
তিনি
বলেন, ‘একটি ব্যাংক সব
আমানত বেশি সুদে নেয়
না। আমানতের ঝুড়িতে কিছু হয় বেশি
সুদের, কিছু কম সুদের।
এভাবে ভারসাম্য করে যারা প্রতিষ্ঠানের
দায় ও সম্পদের ব্যবস্থাপনা
করতে পারে, সেই প্রতিষ্ঠানই ভালো।
সাধারণত যাদের কম সুদের আমানত
বেশি, তারা ভালো প্রতিষ্ঠান
হিসেবে পরিচিত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার এখন উচ্চ সুদে
টাকা ধার করছে। এ
জন্য ব্যাংকের সুদও বেড়ে যাচ্ছে।
আবার ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে
গেছে। ডলারের কারণে টাকারও সংকট চলছে। সরকারি
আমানতও এখন সেভাবে পাওয়া
যাচ্ছে না। এসব কারণে
কোনো কোনো ব্যাংক কিছু
পণ্যে উচ্চ সুদে টাকা
ধার করছে’।
ব্যাংকের
পাশাপাশি মানুষের বিনিয়োগের আরেকটি বড় মাধ্যম হলো
সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হয় তিন
থেকে পাঁচ বছরের জন্য।
মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো
হলে সর্বনিম্ন মুনাফা মেলে ৭ দশমিক
৭১ শতাংশ। মেয়াদ ও টাকার পরিমাণের
ওপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ
১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা
পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাঁদের এ
খাতে ১৫ লাখ টাকার
বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাঁদের মুনাফা কম। বন্ডের সুদহারও
বেশি। সরকার সর্বশেষ ৯১ দিন মেয়াদি
ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ১১ দশমিক ৪০
শতাংশ সুদে টাকা ধার
করেছে। দুই বছর মেয়াদি
বন্ডের সুদ ১২ শতাংশ,
এর বেশি মেয়াদ হলে
সুদ আরও বেশি হয়।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭