ড. আহমদ কায়কাউস পদত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খাতুন। তাকে তিন বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আর এর ফলে তার পিআরএল স্থগিত রাখা হয়েছে। শরিফা খান হবেন প্রথম বাংলাদেশী নারী যিনি বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে যোগ দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের যে পদটি রয়েছে বাংলাদেশের জন্য সেটি আসলে একটি যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার পদ এবং এ পদে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব, সিনিয়র সচিবরা যোগদান করছেন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ড. আহমদ কায়কাউস যখন বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসাবে যোগ দেন, সেখানে যোগ দেওয়ার পর এ পদটি যে কতটা অগুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করতে পারেন। বিশেষ করে বিশ্ব ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ভারত। ভারত সেখানে একজন অতিরিক্ত সচিবকে পদায়ন করেন যিনি পরবর্তীতে সাধারণত অর্থসচিব বা অর্থ সংক্রান্ত কোন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর একজন অতিরিক্ত সচিব যেখানে নির্বাহী পরিচালক সেখানে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বা মন্ত্রিপরিষদ সচিব যান কিভাবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে ড. কায়কাউস এক ধরনের অভিমান এবং পদটির গুরুত্বহীনতা বিবেচনা করেই ঐ পদে আর থাকতে চাননি। ড. আহমদ কায়কাউস একজন মেধাবী সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বিদ্যুৎ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবং প্রচন্ড ক্ষমতাবান একজন আমলাও ছিলেন বটে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পদে যোগ দিয়ে তিনি অনুধাবন করতে পারে যে, এটি কর্মহীন একটি পদ। এখানে আসলে একজন বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের খুব কিছু করার নেই। অন্যান্য দেশ যারা এখানে নিয়োগ দেন তারা অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার ব্যক্তিদেরকে নিয়োগ দেন। যদিও বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের বেতনটি আকর্ষণীয়। ২২ হাজার মার্কিন ডলার মাসিক বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের মত বড় পরিসরের জায়গায় বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদটি একটি গুরুত্বহীন পদ হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। একজন প্রভাবশালী, প্রতিপত্তিশালী, ক্ষমতাবান আমলার জন্য এই পদটি বেশ অপমানজনক বলেও মনে করা হয়। আর এ কারণেই ড. কায়কাউস তার ব্যক্তিত্ববোধে আঘাত লাগার কারণে এই পদে আর থাকতে চাননি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, বিশ্ব ব্যাংকের এই বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের পদে বাংলাদেশ সবসময় একজন গুরুত্বপূর্ণ জ্যেষ্ঠ সচিবকে দায়িত্ব দেয় কেন? এর আগে দুইজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এখন সাবেক ইআরডি সচিব এ পদে যাচ্ছেন। মাঝখানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবও এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অনেকেই মনে করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকে একটু আরাম আয়েশের জীবন কাটানো, এক ধরনের অবসরত্বের সময় কাটানোর জন্যই এ পদে যাওয়া হয়। কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশের কি উপকার হচ্ছে, সেটিও বিবেচনার বিষয়। কারণ বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প পরিচালক পদে যারা যাচ্ছেন, তারা ফিরে এসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতি কৌশলে কোন রকম ভূমিকা রাখতে পারছেন না। অন্যদিকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ যারা কর্তব্যরত অতিরিক্ত সচিব বা একজন সরকারি কর্মকর্তাকে পাঠাচ্ছেন। তারা ফিরে এসে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রশাসনে অবদান রাখতে পারছেন। কাজেই সরকার কেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একটি পদে জ্যেষ্ঠ সচিবদের পাঠাচ্ছেন তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।