ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

পাকিস্তান কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?


প্রকাশ: 12/03/2024


Thumbnail

পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনোই গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়নি। কাগজে-কলমে গণতন্ত্রের দেখা মিললেও পাকিস্তান কখনই পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না।

১৯৪৭ সালে একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের জন্ম হয়। সেসময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাত ধরে পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও অল্প সময়ের মধ্যেই দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রবেশ ঘটে।

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, একেবারে শুরু থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু, এবারের নির্বাচনে ইমরান খানের দল সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমকে উপেক্ষা করে সোশ্যাল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রচারণা চালিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সামরিক বাহিনীকে উপেক্ষা করে পাকিস্তান আদৌ গণতন্ত্র গঠন করতে পারবে কিনা?

বরাবরই দেশটির প্রকৃত ক্ষমতা শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভর করে। দশকের পর দশক ধরেই পরোক্ষভাবে তারাই দেশ শাসন করছে। ক্ষমতা সরকারের হতে তুলে দিলেও পর্দার আড়ালে থেকে তারাই দেশ পরিচালনা করেন। বলা চলে, সিংহাসনের পেছনে বসে আসল ‘রাজা’ তারাই।

সরকার-প্রধানমন্ত্রী এসব নাম মাত্র। সামরিক বাহিনী নিজেদের মর্জি মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেছে।রাজনৈতিক দলেই শেষ নয় বিচারকদেরও প্রভাবিত করে তারা। আর নির্বাচনের সময় বুক ফুলিয়ে চালায় অবাধ কারচুপি। 

পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকার এবং জাতীয় পরিষদ দেশটির সেনাপ্রধান এর তুলনায় সবসময়ই কম ক্ষমতা ভোগ করেন। কখনও কখনও পুরোপুরি সামরিক আধিপত্য না থাকলেও  চলে ছায়া সামরিক শাসন। দশকের পর দশক ধরে পরোক্ষভাবে তারা দেশ শাসন করছে।

১৯৫৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রথমবার সরাসরি সামরিক শাসনের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। দ্বিতীয় সামরিক শাসন ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর তৃতীয়বারের মতো ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। তখন পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় ক্ষমতায় উদারপন্থি শক্তির আগমন ঘটে।

সেনাবাহিনীর হাত ধরে এলেও অনেকের ধারণা ছিল তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খান দেশের রাজনীতির হাওয়া বদলে দেবেন। শেষমেষ দেখা যায়, পূর্বসূরীদের মতোই নড়েবড়ে দশা এখানেও। 

কারন, সেনাবাহিনীর সাথে রেষারেষি করে খুব বেশি দিন টিকতে পারেন নি তিনি। এমন সময়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায় পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের দল। শেষমেষ,  মেয়াদ শেষের  ৩ বছর ৮ মাসের মাথায় ইতি ঘটে ইমরান যুগের। 

তারপর শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইমরান খান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছেন। তবে তা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য নয়, নিজে ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য। সেনাবিরোধী এ শক্তিতেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যান তিনি। 

এসময়, দেশটির শরিক জোট এই গণজোয়ারে শঙ্কিত হয়ে ওঠে। আর তখনই শুরু হয় সরকার ও সেনাশাসকদের হত্যা পরিকল্পনা। রাজপথে বন্দুক হামলার শিকারসহ গ্রেফতার হন অনেকেই। 

৯ মে-এর ওই গ্রেফতার-কাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইমরান সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দপ্তর, লাহোর, পেশোয়ারসহ বেশ কয়েকটি ক্যান্টনমেন্টে ভাঙচুর চালায়। এতে, ইমরান খানের দলের প্রায় ১৩ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করে সরকার। 

রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটাতে ইমরান খানকে মামলার পর মামলা দিয়ে নির্বাচনের আগেই কারাবন্দি করা হয়। এটা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় পাকিস্তান চলছে ‘হাইব্রিড’ শাসনে।

গণতন্ত্রের জন্য যেমন প্রয়োজন একটি বেসামরিক বিরোধীদলের। তেমনি প্রয়োজন নিয়ম দ্বারা সীমাবদ্ধ একটি সরকারও। পাকিস্তানে বর্তমানে এ দুটির কোনটিই নেই। 

গত ৮ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোট কারচুপির কারনে দেশটির রাজনৈতিক ভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পরে। শেষপর্যন্ত, অনেক নাটকীয়তার পর পিএমএল-এন এবং পিপিপিসহ কয়েকটি দল সমঝোতার মাধ্যমে পিএমএল-এনের শাহবাজ শরিফ ২৪তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর ধারাবাহিকতাতেই আসিফ জারদারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

এখন, এই সরকার পাকিস্তানের রাজনীতিতে কতটা পরিবর্তন আনবে সেটিই দেখার বিষয়। পূর্বের ইতিহাসকে ভেঙ্গে এই সরকার কি গণতন্ত্র গঠন করতে পারবে? বা আদৌ তারা গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে চায় কিনা সেটা নিয়েও বিশ্লেষকরা সন্দেহ পোষণ করছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭