ইনসাইড বাংলাদেশ

বাহারি খাবারে বাংলাদেশের ইফতার


প্রকাশ: 12/03/2024


Thumbnail

প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে বাহারি ইফতারের দোকান। যেখানে ছোট থেকে বড়, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের ভিড় জমেছে।  

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে স্বীকৃতির পর এবার পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম ইফতার। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। 

এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ইফতার। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মুখে ইফতারের খাবার তুলে রোজা ভাঙেন মুসল্লিরা। ইফতার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের কাছে একটি ঐতিহ্যও।  

রমজান মাসে সারাদিন না খেয়ে সংযম পালনের পর সন্ধ্যায় যে পানীয় ও খাবার খেয়ে মুসল্লিরা রোজা ভাঙেন, সেই ইফতারকে বিশ্বের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা-ইউনেসকো। 

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর এ ইফতারকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।

বাংলাদেশের ইফতারে নিয়মিত আইটেম থাকে খেজুর, পিঁয়াজু, বেগুনি, হালিম, আলুর চপ, জিলাপি, মুড়ি ও ছোলা, শরবত। এর বাইরে সংযুক্ত হতে পারে হালিম, লাচ্ছি, বিরিয়ানি, কাচ্ছি, ফিশ কাবাব, মাংসের কিমা। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের ফল ফলাদি। 

রমজানে বাংলাদেশের হোটেল-রেস্তোরাঁ গুলো সুন্দরভাবে সাজানো হয়। রেস্তোরাঁর বাইরে আলাদা প্যান্ডেল ও ব্যানার তৈরি করা হয়। এছাড়াও, রাস্তায় রাস্তায় বসে ইফতার বাজার। রোজাদারদের সুবিধার্থে এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় রাখা হয় ইফতারের নানা প্যাকেজ।

রেস্তোরাঁয় ইফতার আয়োজনের উল্লেখযোগ্য আইটেম হলো শরবত, খেজুর, আপেল, জিলাপি (শাহি-রেশমি), পেঁয়াজু, আলুর টপ, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, লাচ্চি, চিকেন বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতী কাচ্চি, চিকেন স্যাটে, চিকেন সাসলিক, চিকেন ফ্রাই, চিকেন কাঠি রোল, চিকেন মোসাল্লেম, চিকেন রেশমি রোল, চিকেন বটি, চিকেন টিক্কা, স্পাইসি চিকেন, ফ্রুট কাস্টার্ড, তেহারি, ফিন্নি, মাঠা, হালিম (গরু-খাসি), ফ্রাইড রাইস, থাই মিক্সড, ভেজিটেবল সালাদ, বিফ কালাভুনা, সুপ্রিম প্ল্যাটার, তেহারি প্ল্যাটার, টিরিয়াকি প্ল্যাটার, কাবাব প্ল্যাটার, শিক কাবাব, জালি কাবাব, টিকা কাবাব, শামি কাবাব, অ্যারাবিয়ান শর্মা, বোরহানি, পুডিং, দই, ফলের জুস, ফালুদা, মুরগির রোস্ট, স্পেশাল পরাটা-নান, স্পেশাল খাসির লেগ রোস্ট।

বাঙ্গালির ইফতারে বিদেশি সংস্কৃতির ছোঁয়া 

বাংলাদেশে ইফতারে যেসব খাবার খাওয়া হয়, তার একটি বড় অংশ এসেছে পার্সিয়ান বা মুঘল খাবারের তালিকা থেকে।  মুঘলরা যখন ঢাকা শাসন করেছেন, তাদের সেই খাদ্য তালিকা তখনকার ঢাকার লোকজন গ্রহণ করেছেন। এরপর সেটা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।

ইফতারে আমাদের প্রধান খাদ্য ছোলা-মুড়ি। এই ছোলা মূলত আফগানদের খাবার। কাবুলিওয়ালাদের হাত ধরেই এটি বাঙালি মুসলমানের ইফতারে জায়গা করে নিয়েছে। তবে, বাংলাদেশে ছোলা আরো মশলা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে মুখরোচক করে রান্না করা হয়ে থাকে। ছোলার সঙ্গে মুড়ি খাওয়ার চলও এই অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব উদ্ভাবন।

হজরত মোহাম্মদ (সা.) ইফতারের সময় খেজুর খেতেন। ইফতারের খেজুর খাওয়া সুন্নত মনে করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই রীতিটি সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। সেজন্যই বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন ইফতারিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত। 

ইফতারে মুঘল ও বাংলার নবাবদের যেসব খানাপিনার কথা জানা যায়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল শরবত, নান, কাবাব, বিরিয়ানি, কোফতা, কোরমা, হালিম, জিলাপি, নিমকপারা ও সমুচার মতো কিছু ভাজাপোড়া। এসব দেখে বাঙালি বনেদি মানুষজনও এগুলো খেতে শুরু করেন।

ইফতারে শরবত খাওয়ার রীতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে রয়েছে। পানির পিপাসা থেকে স্বাদ, মিষ্টি ও সুগন্ধি শরবত খাওয়ার চল চালু হয়েছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭