ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয় পার্টি ভেঙ্গে সরকারের কি লাভ হলো


প্রকাশ: 12/03/2024


Thumbnail

আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টি ভেঙ্গে গেছে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি জাতীয় পার্টি, অন্যদিকে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। জাতীয় পার্টির দুই পক্ষই বলছে, অপর পক্ষ গুরুত্বহীন। এই ভাঙ্গন তাদেরকে কোন রকম প্রভাবিত করবে না। কিন্তু যে যাই বলুক না কেন, বাস্তবে জাতীয় পার্টির এই বিভক্তি দুই পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। রওশন এরশাদের পক্ষে যেমন জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে জিএম কাদেরও দলকে সংহত রাখতে পেরেছেন। এই অবস্থায় জাতীয় পার্টি তার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভাঙ্গনে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং এই দলটি একটি তৃতীয় শক্তি হিসেবে তার সামগ্রিক ভবিষ্যত হারিয়েছে বলেও বিশ্বাস করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে যে সম্ভাবনা জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করেছিলো সেই সম্ভাবনার চির অবসান ঘটলো এই ভাঙ্গনের মধ্য দিয়ে- এমটি মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জাতীয় পার্টির এই ভাঙ্গনে কার কি লাভ হলো। 

জাতীয় পার্টির ভাঙ্গনে জিএম কাদের পন্থীরা বলছেন, জাতীয় পার্টির ভাঙ্গনের পিছনে সরকারের হাত রয়েছে। সরকারই জাতীয় পার্টিকে ভেঙ্গেছে। এর যুক্তি হিসাবে তারা দেখাচ্ছে, রওশন এরশাদের সাথে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদের পক্ষে যারা গেছেন, বিশেষ করে কাজী ফিরোজ রশিদসহ অন্যান্য যে নেতৃবৃন্দ তারা সবাই আওয়ামী ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জাতীয় পার্টি ভাঙ্গনের ক্ষেত্রে তাদের কোন ভূমিকা নেই এবং একটি রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা-গড়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কখনোই প্রভাব বিস্তার করে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যাই বলুক না কেন, জাতীয় পার্টি এবং সাধারণ মানুষ মনে করেন যে, জাতীয় পার্টি ভাঙ্গনের ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ইন্ধন রয়েছে। 

আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টি ভেঙ্গে কি লাভ? এরকম প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৭৫’ পরবর্তী সময়ের পর যে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলোর উত্থান ঘটেছিলো বাংলাদেশে রাজনীতিতে, তাদের মধ্যে বিএনপির পরেই ছিলো জাতীয় পার্টির অবস্থান। তাছাড়াও বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির মৌলিক আদর্শগত তেমন কোন বিভাজন রেখা নেই। যদিও জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগের অনুগ্রহ পাবার জন্য তাদের রং বদল করার চেষ্টা করে। কিন্তু জাতীয় পার্টি ঐতিহাসিকভাবেই ৭৫’ এর ১৫ আগস্টের খুনীদেরকে জাতীয় পার্টি চাকরি দিয়েছে, পদোন্নতি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন তারা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকৃতি দেয়নি, স্বাধীনতা বিরোধী ধারায় তারা দেশকে পরিচালিত করেছে। কাজেই এই বাস্তবতাগুলোকে অস্বীকার করার উপায় নেই। 

আওয়ামী লীগ মনে করে, বাংলাদেশের রাজনীতি যাই হোক না কেন, সকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অবস্থান করবে, বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদকে স্বীকার করবে এবং ইতিহাসকে কেউ বিকৃত করবে না। এই মৌলিক জায়গায় যারা অভিন্ন মতামত রাখবে তাদেরই রাজনীতি করা উচিত। এরকম একটি কৌশলগত অবস্থান থেকেই আওয়ামী লীগ বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিকে দুর্বল এবং অস্তিত্ব শূন্য করতে চায়। আর সেই কারণে যদি জাতীয় পার্টির ভাঙ্গনে সরকারের প্রচ্ছন্ন হাত থাকে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। ৭৫’ এর পরবর্তীতে বাংলাদেশ যে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনীতির মূল ধারা দখল করেছে সেই রাজনীতির জঞ্জাল পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে  আওয়ামী লীগের এই কৌশলগত অবস্থানে আদর্শিক লাভ অনেক।    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭